রাজনীতির মঞ্চে আলোচিত তরুণ নেতা ইশরাক হোসেনকে নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক। দলটির স্থানীয় সরকারবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব এক সাক্ষাৎকারে ইশরাকের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে ‘আইন লঙ্ঘন’ ও ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন—তিনি এখন ভুল পথে হাঁটছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছেন।
এক বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ মাহমুদ সরাসরি বলেন, "ইশরাক হোসেন বর্তমানে যেসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তা আইন পরিপন্থী। তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে—যাতে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লোটা যায়।" তিনি স্পষ্ট করে জানান, একজন তরুণ নেতা হিসেবে ইশরাকের আরও দায়িত্বশীল ও পরিণত আচরণ জরুরি হয়ে উঠেছে।
বিএনপি ও সরকারের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে ইতিবাচক দিকে রয়েছে। সেই সম্পর্ক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে দলীয় নেতাদের সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে ইশরাকের মতো নেতাদের উচিত সংঘাত নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজা।
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম, ইশরাক তার মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করুক। এমনকি তার জন্য ফাইলও প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু তখন বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে সেটি স্থগিত রাখা হয়।" এই বক্তব্যে বিএনপির অভ্যন্তরে শপথ বিষয়ে দ্বিধা ও আইনগত জটিলতার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।
অন্যদিকে, দলীয় সিদ্ধান্ত কিংবা শপথ গ্রহণ ছাড়াই ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন—যা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ১৮ জুন নগরভবনে আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি উদ্বোধন করেন মশক নিধন কার্যক্রম। একইদিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে নগর পরিচালনায় ‘একতরফাভাবে প্রশাসক নিয়োগ’ করার অভিযোগও তোলেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, “আমরা আন্দোলনের মধ্যেও নাগরিকদের সেবা দিতে কাজ করছি। অথচ আমাদের পথে বাধা সৃষ্টি করতে নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া মানে আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করা।”
এই বক্তব্যে ইশরাক স্পষ্ট করে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তবে দলীয় উপদেষ্টার বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে—বিএনপির কেন্দ্র থেকেও ইশরাকের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, বিএনপির ভেতরেই এখন দ্বিধা: তরুণ নেতৃত্বকে নিয়ে দলের কৌশলগত চিন্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের শেষ মন্তব্য ছিল সরল ও সুস্পষ্ট— “সমঝোতা ও দায়িত্ববোধ ছাড়া রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে না। তরুণ নেতাদের উচিত হবে সংঘাত নয়, আলোচনার পথ বেছে নেওয়া।
ইশরাক হোসেনের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা তুঙ্গে। শপথ না নিয়েও নগর কার্যক্রমে সক্রিয় থাকা, সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অভিযোগ এবং বিএনপির ভেতর থেকেই আসা কঠোর মন্তব্য—সব মিলিয়ে ইশরাক এখন কেন্দ্রবিন্দুতে। সময় বলে দেবে, তিনি দলীয় নির্দেশনা মেনে দায়িত্বশীল হবেন নাকি আলাদা পথে হাঁটবেন।