মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ আবারও চরমে উঠেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আলি শাদমানি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং বার্তা সংস্থাগুলো এই খবর নিশ্চিত করেছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে পরিচিত শাদমানি দেশটির ‘রেভল্যুশনারি গার্ডস কমান্ড সেন্টার’-এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য নির্ধারিত চিফ অব স্টাফ হিসেবেও তিনি দায়িত্বে ছিলেন।
সূত্র জানায়, ১৭ জুন একটি গোপন ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)। তখন থেকেই শাদমানি গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে ঘটনার পরপরই ইসরায়েল দাবি করে যে, তাদের অভিযানে শাদমানি নিহত হয়েছেন। তখন ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেনি।
শাদমানিকে সম্প্রতি খাতাম আল–আনবিয়া সদরদপ্তরের নতুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে এই পদে ছিলেন আরেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ, যিনি এক মাস আগে আরেকটি বিমান হামলায় নিহত হন। মাত্র চারদিন আগেই শাদমানি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
খাতাম আল–আনবিয়া হলো ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর একটি স্ট্র্যাটেজিক নির্মাণ ও প্রকৌশল ইউনিট। এটি যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকল্পনা এবং যৌথ সামরিক অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। এখানে রেভল্যুশনারি গার্ড ও নিয়মিত সেনাবাহিনী একযোগে কাজ করে থাকে।
ইরান সরকার এবং রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী এই হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে বিবেচনা করছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জেনারেল শাদমানির রক্ত বৃথা যাবে না। শত্রুরা তাদের কৃতকর্মের চরম মূল্য দিতে বাধ্য হবে।”
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে জেনারেল শাদমানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেও উল্লেখ করেছে আইডিএফ। এ কারণেই হয়তো তাকে ‘টার্গেট কিলিং’-এর মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে ইসরায়েল।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধু ইরান-ইসরায়েল নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থার সম্ভাবনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ইরানের মিত্র দেশগুলো ইতোমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে এবং ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা ইরানকে সরাসরি সামরিক জবাবদানের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিপ্লবী গার্ড ইতোমধ্যে হরমুজ প্রণালী ও গাজার আশপাশে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
জেনারেল শাদমানির মৃত্যু শুধু একজন সামরিক কমান্ডারের পতন নয়; এটি একটি প্রতীকী ঘটনা, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও জটিল করে তুলবে। এখন দেখার বিষয়, ইরান আসলে কতটা ‘কঠোর প্রতিশোধ’ নেয়, এবং এর প্রতিক্রিয়ায় আবার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় ইসরায়েল।