মধ্যপ্রাচ্য আবার উত্তাল। তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর চালানো এক নিখুঁত হামলায় ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের মেধা ও মস্তিষ্ক বলে পরিচিত ১২ জন শীর্ষ বিজ্ঞানী প্রাণ হারিয়েছেন। এই দাবি জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের লক্ষ্য করেই আঘাত হানা হয়। এতে অন্তত ৯ জন শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী সঙ্গে সঙ্গে নিহত হন। পরে ইরানি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন আরও ৩ জন বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
নিহত ১২ জনের প্রত্যেকেই ছিলেন পারমাণবিক গবেষণা ও অস্ত্র উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী। তাদের মধ্যে ছিলেন—
-
ফেরেইদুন আব্বাসি (পারমাণবিক প্রকৌশল)
-
মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি (পদার্থবিজ্ঞান)
-
আকবর মোতালেবি জাদেহ (রসায়ন প্রকৌশল)
-
সাঈদ বারজি (ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং)
-
আমির হাসান ফাখাহি (পদার্থবিজ্ঞান)
-
আব্দ আল-হামিদ মিনোশেহর (রিঅ্যাক্টর ফিজিক্স)
-
মানসুর আসগারি (পদার্থবিজ্ঞান)
-
আহমদ রেজা জুলফাগারি দারিয়ানি (পারমাণবিক প্রকৌশল)
-
আলী বাখৌয়েই কাতিরিমি (যান্ত্রিক প্রকৌশল)
এই বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ ছিলেন ইরানের ‘পারমাণবিক অস্ত্রের জনক’ হিসেবে পরিচিত মোহসেন ফাখরিজাদেহ’র ঘনিষ্ঠ সহচর। ফাখরিজাদেহ ২০২০ সালে এক ইসরায়েলি অপারেশনে নিহত হন। তার উত্তরসূরিদেরও একই পরিণতির শিকার হতে হলো।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিবৃতিতে জানায়, "ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তা শুধু আমাদের নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য হুমকি। এই অভিযান আত্মরক্ষামূলক এবং তথ্য-নির্ভর।"
তাদের দাবি, ইরান দীর্ঘদিন ধরেই গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে আসছিল, যা আন্তর্জাতিক চুক্তির পরিপন্থী। এবার তারা ওই শক্তিকে ভিত্তিমূল থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ইরান এখনো সরকারি কোনো জবাব দেয়নি, তবে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এই ঘটনা। বলা হচ্ছে, "এটি শুধুমাত্র হামলা নয়, বরং ইরানের বিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ওপর সরাসরি আঘাত।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ১২ বিজ্ঞানী ছিলেন এমন সব প্রকল্পের দায়িত্বে, যেগুলো ইরানকে সামরিক পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে রূপান্তরের পথে নিয়ে যাচ্ছিল।
এ হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পরিস্থিতি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ইসরায়েলের এই হামলা শুধু ইরানের বিজ্ঞানীদের হত্যা নয়, বরং বড় ধরনের কৌশলগত বার্তা। এটি সরাসরি ইরানের প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় এক আঘাত যা শিগগিরই কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়বে না।
এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ইরান প্রতিশোধ নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। বিশ্ববাসী এখন চেয়ে আছে, ইরান কেমন জবাব দেয় এবং এই উত্তেজনার আগুন কোথা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।