close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ইরানের পারমাণবিক বাংকার ধ্বংস করতে পারে যে শক্তিশালী মার্কিন বোমা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন একটি ‘নন-নিউক্লিয়ার’ সুপার বোমা রয়েছে, যা পাহাড়ের নিচে লুকানো ইরানের পরমাণু স্থাপনাও ধ্বংস করতে সক্ষম! ফরদোকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ছায়া ঘনিয়ে আসছে।..

মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা একটি অতিশক্তিশালী বোমা, যা এতদিন গোপনে রাখা হয়েছিল, এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এই বোমা—‘জিবিইউ-৫৭এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ বা সংক্ষেপে এমওপি—ধারণা করা হয়, এটি পাহাড়ের অনেক নিচে থাকা ইরানের ফরদো পারমাণবিক স্থাপনাকেও ধ্বংস করতে সক্ষম।

এমওপি একটি নন-নিউক্লিয়ার সুপার বাংকার ব্লাস্টার বোমা, যার ওজন প্রায় ১৩,৬০০ কেজি (৩০,০০০ পাউন্ড)। এটি কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায় না, কিন্তু বাংকার ধ্বংসে এর কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এমওপি ৬০ মিটার গভীরতায় প্রবেশ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। এমনকি যদি পরপর একাধিক এমওপি ব্যবহার করা হয়, তবে প্রতিটি বিস্ফোরণে তৈরি হয় আরও গভীরে প্রবেশের পথ।
এমওপি নির্মাণ করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং। এই অস্ত্র এখনও পর্যন্ত কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি, তবে নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জে এটি সফলভাবে পরীক্ষিত হয়েছে।

এটি এমনকি বিখ্যাত ‘মাদার অব অল বোম্বস’—এমওএবি থেকেও বেশি শক্তিশালী। উল্লেখ্য, এমওএবি বোমা ২০১৭ সালে আফগানিস্তানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু এমওপি শুধু শক্তিশালী নয়, এটি ইরানের মতো ভূগর্ভস্থ নিরাপদ স্থাপনাও ধ্বংসে সক্ষম।

এই মহাশক্তিশালী বোমাটি বহন করার মতো সক্ষমতা কেবলমাত্র রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বি-টু স্পিরিট স্টিলথ বম্বার বিমানের। এই বিমান ৪০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে এবং ৭,০০০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে পুনরায় জ্বালানি ছাড়াই।

প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নর্থরপ গ্রুম্যান বলছে, এই বিমান ঘন্টায় পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পৌঁছাতে পারে। তবে এত আধুনিক প্রযুক্তি সত্ত্বেও, এমওপি বোমা ব্যবহার করা সহজ নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের মতো শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই বোমা ব্যবহার করতে হলে কেবল বি-টু নয়, এফ-২২ যুদ্ধবিমান এবং ড্রোনের সহায়তা লাগবে। তাছাড়া, এমওপি বোমার স্টকও সীমিত—যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আছে মাত্র ১০ থেকে ২০টির মতো।

ফরদো কমপ্লেক্স—ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র, যা ২০০৬ সালে নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০০৯ সালে সক্রিয় হয়। এটি ক্বোম শহরের নিকটে একটি পর্বতের নিচে, প্রায় ৮০ মিটার গভীরে অবস্থিত। এ কারণেই এই ঘাঁটিকে ধ্বংস করা কঠিন—এবং এমওপি বোমার প্রয়োজনীয়তা সেখানেই।

আইএইএ (আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা) ২০২৩ সালের মার্চে জানিয়েছিল, ফরদো ঘাঁটিতে পাওয়া ইউরেনিয়ামের পরিশোধন মাত্রা ৮৩.৭%, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একাধিকবার ফরদোকে "ইসরায়েলের জন্য হুমকি" হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
তবে ইসরায়েলের কাছে এমওপি ব্যবহারের প্রযুক্তি নেই, এবং যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদেরকে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি।

ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্র দূত ইয়েখিয়েল লেইটার জানিয়েছেন, ফরদো ধ্বংসের লক্ষ্যেই ইসরায়েল প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, "সব সময় আকাশ থেকে বোমা ফেলার মাধ্যমেই সব কিছু করা যায় না।

এই প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে এমওপি বোমা ব্যবহারে সম্মতি দেয়, তবে তা হতে পারে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযানের সূচনা।
তবে এখনো হোয়াইট হাউস এই বিষয়ে পরিষ্কার অবস্থান নেয়নি।

প্রফেসর পল রজার্সের মতে, ‘এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে আমেরিকার রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি সরাসরি জড়াতে চান কি না।

ইরান সবসময় বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির তথ্য এবং ফরদোর গভীর স্থাপনাগুলো ঘিরে সন্দেহ দিন দিন বাড়ছে।
এমওপি বোমা এখন শুধু অস্ত্র নয়, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বা যুদ্ধের নির্ণায়ক হতে পারে।

Tidak ada komentar yang ditemukan