মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রায় চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। ইরানে ইসরায়েলের ভয়াবহ ড্রোন হামলার পর পাল্টা প্রতিশোধে নামছে তেহরান। এরই মধ্যে ইরান একের পর এক পাল্টা বিমান হামলা শুরু করেছে, যা গোটা অঞ্চলে উত্তেজনার পারদ অনেক উঁচুতে তুলে দিয়েছে। আর এই সংকটময় মুহূর্তে হঠাৎ করেই 'নিখোঁজ' হয়ে গেলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, পাল্টা হামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় অজ্ঞাত একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি সেই স্থানটি এতটাই গোপন যে, ইসরায়েলের অধিকাংশ নিরাপত্তা সংস্থাও তা প্রকাশ করেনি।
তবে আন্তর্জাতিক কিছু সূত্র দাবি করছে, নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত জেট বিমানকে তড়িঘড়ি করে আকাশে উঠতে দেখা গেছে এবং সেটি ইসরায়েল ছেড়ে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে অবতরণ করেছে। সেই সময় বিমানটির চারপাশে দু’টি জঙ্গিবিমানও উপস্থিত ছিল, যা ছিল তার নিরাপত্তা বলয়ের অংশ।
ইসরায়েলের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ১২-এর এক রিপোর্টে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভূতপূর্ব মাত্রার গোপন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাকে বহনকারী বিমানটি এথেন্সে নিরাপদে পৌঁছেছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, শুক্রবার ভোররাতে ইরানে চালানো ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় দেশটির সামরিক কাঠামোয় বড়সড় ধাক্কা লাগে। প্রাণ হারান অন্তত ২০ জন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি’র প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং খাতাম আল-অনিবিয়া সামরিক ঘাঁটির কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলী রশিদ।
এই হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতাদের নির্দেশে শুরু হয় পাল্টা অভিযান। বিশেষ করে দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের এলিট ইউনিটগুলোকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। ইরানি ড্রোন ও মিসাইল সিস্টেমগুলো ইসরায়েলের দিকে মুখ করে মোতায়েন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে কাতারভিত্তিক একাধিক পর্যবেক্ষক সংস্থা।
বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক অঙ্গন এখন নিঃশ্বাস বন্ধ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। মধ্যপ্রাচ্য এখন রীতিমতো বিস্ফোরক এক বারুদের স্তূপ। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, তুরস্কসহ বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলো এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিকভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েলভিত্তিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুকে সরিয়ে নেওয়া মানে শুধুই নিরাপত্তা নয়—এটি একটি কৌশলগত বার্তা। ইসরায়েল সম্ভবত বড় ধরনের প্রতিরোধের আশঙ্কা করছে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সরকারের মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সুরক্ষায় রাখতে চাইছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যুদ্ধ থামানোর কোনও লক্ষণ নেই। বরং, নেতানিয়াহুর এই আচমকা গোপন প্রস্থানের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েল সামনের দিনগুলোতে আরও বড় ধরনের হামলার শঙ্কা করছে। তেমন কিছু ঘটলে গোটা অঞ্চল জ্বলতে পারে এক ভয়াবহ যুদ্ধের আগুনে।
নেতানিয়াহুর এই গোপন অবস্থান বদল শুধু ইসরায়েলের নিরাপত্তা ইঙ্গিতই নয়, বরং তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অশনিসংকেত। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা হতে পারে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সময়। এখন শুধু অপেক্ষা—এই সংঘাত থামবে, না ছড়িয়ে পড়বে আরও বড় পরিসরে?