close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইরানের আরাক পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালাল ইসরাইল

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের কুখ্যাত আরাক পারমাণবিক চুল্লিতে ইসরাইলের আচমকা হামলায় তোলপাড় গোটা বিশ্ব। পারমাণবিক প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দুতে এই হামলা নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পরমাণু অস্ত্র যুদ্ধের আশঙ্কা কি এবার ..

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে ইরানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরাক পারমাণবিক কেন্দ্রে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, দেশটির আরাক শহরের ভারি পানি-চালিত চুল্লিতে এই হামলা হয়।
এ হামলার আগেই ইসরাইলের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নিতে সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।

আরাক শহরের এই পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যবহৃত হয় ডিউটেরিয়াম অক্সাইড বা 'ভারি পানি'। এটি মূলত পারমাণবিক চুল্লিকে শীতল রাখতে ব্যবহৃত হলেও, এর উপজাত হিসেবে তৈরি হয় প্লুটোনিয়াম – যা সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

এই কেন্দ্র নিয়ে বরাবরই আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছিল। কারণ এটি এমন একটি চুল্লি, যা কার্যকরভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির রাস্তা খুলে দিতে পারে।

বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী, ইরান রাজি হয় আরাক চুল্লির নকশা পরিবর্তনে।
চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল – এমন প্রযুক্তিগত রূপান্তর ঘটানো যাতে এই চুল্লি থেকে প্লুটোনিয়াম উৎপাদন কমে যায়, এবং সামরিক উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার ঠেকানো যায়।

ইরানের দাবির বরাত দিয়ে বলা হয়, এই পারমাণবিক প্রকল্প সম্পূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যসহ কিছু পশ্চিমা দেশও এই নতুন নকশায় ইরানকে সহায়তা করে এসেছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বেসামরিক উদ্দেশ্যের আড়ালে সামরিক প্রস্তুতির কথাও অস্বীকার করা যায় না। এই বাস্তবতা ইসরাইলকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল।

ইসরাইল বরাবরই ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। তাদের অভিযোগ—ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে।
আরাক চুল্লি ছিল এমন একটি কেন্দ্র, যেখানে থেকে তড়িৎ গতিতে প্লুটোনিয়াম আহরণ সম্ভব।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ইসরাইলের এই হামলা ছিল ‘প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক’, অর্থাৎ সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি প্রতিহত করার একধরনের আগাম পদক্ষেপ।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি 'Bunker Buster' নামের শক্তিশালী বোমা ইরানের পারমাণবিক বাংকার ধ্বংসে সক্ষম—এমন তথ্য আগেই ফাঁস হয়েছিল।
যদিও এবার ঠিক কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে আরাক চুল্লির মত একটি শক্তিশালী কেন্দ্রে সফল হামলা চালাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটেছে বলেই অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধাবস্থার সূচনা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইরান এখনো এ বিষয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে তারা পাল্টা জবাব দেবে – এমন আভাস ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্ব রাজনীতি এখন তাকিয়ে আছে তেহরান ও তেল আবিবের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। যদি ইরান পাল্টা হামলা চালায়, তবে গোটা মধ্যপ্রাচ্য বিস্ফোরণমুখী হয়ে উঠবে, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।

আরাক চুল্লিতে ইসরাইলের হামলা এখন শুধু একটি সামরিক অভিযান নয় – এটি এক বিশাল ভূরাজনৈতিক সংকেত
বিশ্বের পারমাণবিক ভবিষ্যত, মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা, এবং ইরান-ইসরাইল সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

No comments found