close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে উত্তর কোরিয়া..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দায় উত্তাল আন্তর্জাতিক মহল। উত্তর কোরিয়া একে বলছে জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন এবং বিশ্বশান্তির ওপর সরাসরি হুমকি। এই আগ্রাসনের প্রতিবাদে উঠছে একযোগে আওয়াজ।..

মধ্যপ্রাচ্যে আগুন ছড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল: ইরানে হামলার তীব্র নিন্দা জানালো উত্তর কোরিয়া

ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ আগ্রাসনকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এবার সরাসরি বিবৃতি দিয়ে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানালো উত্তর কোরিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সোমবার (২৩ জুন) এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসন শুধু ইরানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদেরও সরাসরি লঙ্ঘন।

উত্তর কোরিয়ার বিবৃতিতে বলা হয়, “এই হামলা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তাকে সহিংসভাবে পদদলিত করেছে। এটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং বিশ্বশান্তির প্রতি অবজ্ঞাসূচক।” একইসঙ্গে দেশটি আহ্বান জানিয়েছে— “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আগ্রাসন ও সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে রুখে দাঁড়ায় এবং সর্বসম্মতভাবে এর নিন্দা জানায়।”

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ২১ জুন রাতে এক ভয়াবহ মোড় নেয় পরিস্থিতি। সেই রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহান—এই তিনটি স্থাপনাই ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল স্তম্ভ। যদিও হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, তবে পরিকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে টার্গেট করেনি, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনার দাবানল জ্বালিয়ে দিয়েছে।

এর আগেই, ১৩ জুন গভীর রাতে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ইরানের ওপর একতরফা সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে পরিচালিত এই অভিযানে ইহুদি রাষ্ট্রটি ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং আবাসিক ভবনে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায়।

হামলায় নিহত হন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের কমান্ডার গোলাম আলি রশিদসহ অন্তত দশজন পরমাণু বিজ্ঞানী ও ৪০০-র বেশি মানুষ। বিশ্ববাসী এমন নিষ্ঠুর ও অপ্রস্তুত আক্রমণে স্তব্ধ হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের এই বর্বর হামলার জবাব দিতে দেরি করেনি তেহরান। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইরান শুক্রবার রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে পাল্টা হামলা চালায়। ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা Iron Dome ভেদ করে রাজধানী তেলআবিব ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে।

যদিও প্রাণহানির সংখ্যা তুলনামূলক কম, তবে হামলায় ইসরায়েলের বিপুল আর্থিক ও পরিকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলি মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, “এটা ছিল ২০০৬ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ।

উত্তর কোরিয়ার বক্তব্যে এটাই স্পষ্ট—তারা কেবল ইরানের পক্ষ নেননি, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ‘মৌলিক হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিবৃতি শুধু নীতিগত অবস্থান নয়, বরং একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক মোড় নেওয়ার পূর্বাভাস।

চীন, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা ও সিরিয়াও ইরানকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এখনো কোনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি, যা এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ জোট রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে চলা এই সংঘাত শুধু ইরান-ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। উত্তর কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রের বিবৃতি এটিই প্রমাণ করে যে, এই যুদ্ধ আন্তর্জাতিক এক উত্তাল পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক মহল এখন চোখ রাখছে জাতিসংঘের পরবর্তী পদক্ষেপে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—এই আগুন কি এখানেই থামবে, নাকি তা ছড়িয়ে পড়বে এক ভয়াবহ বিশ্ব সংঘর্ষে?

Không có bình luận nào được tìm thấy


News Card Generator