close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইরানে হামলার প্রতিবাদে পরমাণু শক্তিধর তিন দেশের কড়া বার্তা ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা। এই প্রেক্ষাপটে পরমাণু শক্তিধর রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান একযোগে জাতিসংঘে কড়া বার্তা দিয়ে যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছ..

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কড়া বার্তা দিয়েছে বিশ্বের তিন পরমাণু শক্তিধর দেশ—রাশিয়া, চীন এবং পাকিস্তান। দেশগুলো একযোগে জাতিসংঘে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যেখানে অবিলম্বে ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা সতর্ক করেছে, এই সংঘাত দ্রুতই ভয়াবহ রূপ নিতে পারে যদি এখনই থামানো না হয়।

খসড়া প্রস্তাবে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করা না হলেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণকে ‘অবৈধ ও বিপজ্জনক নজির’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মূলত আমেরিকান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক জবাব।


বোমার আগুনে কূটনৈতিক সম্ভাবনা পুড়ছে: গুতেরেস

ইরানের অনুরোধে ডাকা এই জরুরি অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা মধ্যপ্রাচ্যকে এক বিপজ্জনক মোড়ে নিয়ে গেছে।” তিনি বলেন, “এই সংঘাত থামাতে হলে এখনই যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে এবং গম্ভীর ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরে যেতে হবে।”

গুতেরেস তার বক্তব্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সবার আগে মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে হবে।


ইরান: শান্তি চুক্তিকে অস্ত্র বানানো হয়েছে

জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, “ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিকে এখন রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার নিয়ে কথা বললেও, যুক্তরাষ্ট্র তা রক্ষা না করে উল্টো আগ্রাসন চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক বিধির প্রতি যে অবজ্ঞা চলছে, তা গোটা বৈশ্বিক শৃঙ্খলার জন্য হুমকি।”


পাকিস্তানের কড়া অবস্থান: আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে থামান

জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার বলেন, “ইতিহাস সাক্ষী যে একতরফা সামরিক হস্তক্ষেপ কখনোই শান্তি আনে না, বরং তা সংঘাতকে আরও গভীর করে তোলে।”
তিনি সরাসরি বলেন, “এখনই যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সংলাপ ও কূটনীতিই একমাত্র টেকসই সমাধান।”

পাকিস্তান ইতোমধ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে একত্রে যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সব পক্ষকে উত্তেজনা পরিহার করতে হবে, বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য কূটনৈতিক সমাধানের দিকে এগোতে হবে।

জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, “ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে এখনো কূটনৈতিক সমাধানের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। বলপ্রয়োগ করে কখনোই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে না।
তিনি বলেন, সংলাপের দরজা বন্ধ না করে, সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে হবে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, “২০০৩ সালে কলিন পাওয়েল ইরাকের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ নামে এক মিথ্যা গল্প শুনিয়ে। আজ আমরা আবারও সেই গল্প শুনছি।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেন, “তারা ইতিহাস থেকে কিছুই শেখেনি। আজকের আগ্রাসন শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি।

এই খসড়া প্রস্তাবটি কবে ভোটে তোলা হবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বলা হয়েছে সোমবার রাতের মধ্যে মতামত জানাতে হবে।
খসড়াটি পাস করাতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের কমপক্ষে ৯টি সদস্যের সমর্থন লাগবে এবং পাঁচ স্থায়ী সদস্যের (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন) মধ্যে কোনো দেশের ভেটো না দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বিরোধিতা ও ভেটো নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে যখন প্রস্তাবে তাদের নাম না থাকলেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সরাসরি নিন্দা করা হয়েছে।

এই প্রস্তাব জাতিসংঘে পাশ হোক বা না হোক, একটি বিষয় স্পষ্ট—মধ্যপ্রাচ্য এখন আবারও নতুন এক সংঘাতের প্রান্তে দাঁড়িয়ে। বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কূটনীতিকে সামনে রেখে যুদ্ধ থামাতে চাইলেও, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন না করে, তাহলে সামনে আরও ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে হতে পারে।

کوئی تبصرہ نہیں ملا


News Card Generator