ইরানে গুপ্তচরদের ধ্বংসযজ্ঞ: মোসাদের ৫৪ সদস্য গ্রেফতার, চরম উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালল তেহরান!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষের মধ্যে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশে এক চাঞ্চল্যকর অভিযানে মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা ৫৪ জন গুপ্তচরকে গ্রেফতার করেছে ইরান। সরকারি তথ্য বলছে, তারা দেশের ভেতর তথ্য পাচার, গুজব ছড়ানো ..

ইরান-ইসরায়েলের উত্তপ্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবার চমকপ্রদ অভিযান চালিয়ে গোটা দুনিয়াকে চমকে দিল ইরান। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশে মোসাদ সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন গুপ্তচরকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানের নেতৃত্বে ছিল ইরানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রসিকিউটর অফিস। অভিযোগ—এই ব্যক্তিরা দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার এবং সরাসরি শত্রু রাষ্ট্র ইসরায়েলের হয়ে তথ্য পাচারে জড়িত ছিল।

২১ জুন শনিবার তুরস্কের প্রভাবশালী বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি (AA) এই খবর নিশ্চিত করেছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার ইরানি কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি, রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার ও সমাজে আতঙ্ক ছড়ানোর গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

ইরানের আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম ফার্স নিউজ এজেন্সি জানায়, আটককৃতরা কেবলমাত্র সন্দেহভাজন নয়, বরং তাদের মোসাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে। এসব প্রমাণ ইরান সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং তারা দাবি করেছে—এই নেটওয়ার্ক দেশের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল।

এজেন্সিটি আরও জানায়, অভিযুক্তরা ইরানের সামরিক স্থাপনাসমূহ, পরমাণু প্রকল্প এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও কোডেড চ্যানেলের মাধ্যমে ইসরায়েলে পাচার করছিল। একই সঙ্গে তারা সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে মানসিক অস্থিরতা ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোরও চেষ্টা চালাচ্ছিল।

গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া দ্বিপাক্ষিক সংঘাতে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে। পাল্টা জবাবে, ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও একাধিক হামলা চালিয়েছে।

সরকারি তথ্য মতে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এ পর্যন্ত ২৫ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইরানের দাবি অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ৬৩৯ জন ইরানি নিহত এবং প্রায় ১৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরণের গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা শুধু ইরান নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
বিশেষ করে মোসাদের মতো শীর্ষ পর্যায়ের একটি গোয়েন্দা সংস্থার ৫০ জনের বেশি সদস্য একসঙ্গে ধরা পড়া এই প্রথম, যা গোয়েন্দা ইতিহাসে বিরল।

এই ঘটনার পর ইরানে আরও কঠোর নিরাপত্তা জারি হয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি সেনা সদস্য।

এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরণের চাঞ্চল্যকর গ্রেফতার ইসরায়েল-ইরান সম্পর্কে আরও টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ যুদ্ধের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না

মোসাদের মতো কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থার এত বড় একটি নেটওয়ার্ক ধরা পড়া নিঃসন্দেহে ইরানের জন্য বড় কৃতিত্ব।
তবে এর বিপরীতে সম্ভাব্য প্রতিশোধ, যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator