শনিবার তেহরানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গিরি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিক অভিযানে আটক আরও ২০ জনকে পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
জাহাঙ্গিরি বলেন, “বিচার বিভাগ গুপ্তচর ও ইহুদিবাদীদের এজেন্টদের প্রতি কোনো রকম ক্ষমা প্রদর্শন করবে না। কঠোর বিচারের মাধ্যমে এসব ঘটনা উদাহরণ হিসেবে রাখা হবে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।”
এই গ্রেপ্তারের মাত্র তিন দিন আগে ইরান নিজ দেশের এক পরমাণু বিজ্ঞানী রুজবেহ ভাদীকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি আরেক বিজ্ঞানীর গোপন তথ্য ইসরায়েলের কাছে সরবরাহ করেছিলেন। ওই বিজ্ঞানী গত জুনে ইসরায়েলের একটি আক্রমণে নিহত হন।
ইরানের সরকারি সূত্র জানায়, ভাদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ ছিল শক্তিশালী, এবং তার বিচারের সব ধাপ দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
গত জুনে ইসরায়েল ইরানের ভেতরে আকস্মিক হামলা চালায়, যেখানে গুপ্তচরদের সহায়তায় একাধিক সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এই ঘটনার পর থেকেই তেহরান গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ধ্বংসে তৎপর হয় এবং দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে।
ইরান দাবি করে, এসব হামলার মূল পরিকল্পনা ছিল দেশটির প্রতিরক্ষা ও পরমাণু কর্মসূচিকে দুর্বল করা। মোসাদের সহায়তায় চালানো এ হামলাগুলোকে তারা সরাসরি “রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দুই সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধ হয়, যা সীমান্ত সংঘর্ষ থেকে শুরু হয়ে আকাশ ও সাইবার হামলায় রূপ নেয়। যুদ্ধ শেষে ইরান অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করে এবং সন্দেহভাজন ইসরায়েলি এজেন্টদের শনাক্তে গোয়েন্দা অভিযান বাড়ায়।
ইরানের নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে অন্তত আটজন প্রমাণিত ইসরায়েলি গুপ্তচরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই এজেন্টরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক, প্রযুক্তিগত এবং পারমাণবিক তথ্য বিদেশে পাচার করেছিল।
ইরানের বিচার বিভাগ বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে হলেও জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অপরাধে কোনো শিথিলতা দেখানো হবে না। তারা দাবি করছে, ইসরায়েলের হয়ে কাজ করা এই এজেন্টরা শুধু ইরানেরই ক্ষতি করেনি, বরং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিচার বিভাগের মুখপাত্রের ভাষায়, “যে কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড আরও উৎসাহ পাবে।”
এ ঘটনায় এখনও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য আসেনি। তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান–ইসরায়েল দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আগে থেকেই ইরানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও দ্রুত বিচারের প্রক্রিয়া এবং গোপন আদালতের কার্যক্রমের সমালোচনা করেছে।
ইরানের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারি অভিযান শুধু ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের গোয়েন্দা যুদ্ধের তীব্রতা প্রকাশ করছে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।
আসন্ন সপ্তাহগুলোতে এই ঘটনাবলি দুই দেশের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স