ইমরানকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁদে শেহবাজ! পাকিস্তানে ফের ক্ষমতা যুদ্ধের নাটকীয় সূচনা
পাকিস্তানের ইতিহাসে কখনো কোনো নির্বাচিত সরকার তাদের পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। সেনা হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, দলীয় বিভাজন—সব মিলিয়ে দেশটির রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা যেন এক অলীক কল্পনা। সর্বশেষ ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। অথচ সেই একই চক্রান্তের ছায়া এবার ঘনিয়ে আসছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের ওপর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা যেন নিজের তৈরি ফাঁদেই নিজে আটকে পড়ার মতো অবস্থা। একসময় ইমরান খানের সরকার হটাতে যে কৌশল শেহবাজের দল নিয়েছিল, সেই পথেই এখন হাঁটছে ইমরানপন্থীরা। পিটিআই তথা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের তরফে শোনা যাচ্ছে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনার খবর। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিকের বিরুদ্ধেও অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে তারা।
জিও নিউজের প্রতিবেদন বলছে, এটি কেবল রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, বরং শেহবাজ সরকারকে কোণঠাসা করার কৌশল। কারাগারে বন্দী থেকেও ইমরান খান দলের রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। তিনি নিয়মিতভাবে আইনজীবী, শীর্ষ নেতাকর্মী এবং পারিবারিক সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে কৌশল নির্ধারণ করছেন। পার্লামেন্ট স্পিকারের পদত্যাগ চেয়ে সাম্প্রতিক বক্তব্যে মিল্লি আওয়ামী পার্টির মাহমুদ খান আচাকজাই যে বক্তব্য রেখেছেন, তা ইমরানও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।
তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে পিটিআই-এর সাবেক স্পিকার আসাদ কায়সারের বক্তব্য। তিনি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, অনাস্থা প্রস্তাব তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। যদিও তিনি সরাসরি তারিখ বা পরিকল্পনা জানাননি, কারণ বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে প্রকাশ্যে এমন কিছু আনলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বলে দলের অভিমত।
জেলে থেকেও কুশীলব ইমরান
আদিয়ালা কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থাতেও ইমরান খানের রাজনৈতিক সক্রিয়তা অনেককেই চমকে দিচ্ছে। তার নির্দেশে দল ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা শুরু করেছে। বিশেষ করে স্পিকারের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে চাপ সৃষ্টি করা এবং অনাস্থা প্রস্তাবকে সামনে রেখে আন্দোলনের ছক কষা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—এই কৌশল যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে কি শেহবাজ শরীফ সেই একই ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছেন যেটি একসময় ইমরান খানকে ঠেলে দিয়েছিল পতনের মুখে? কারণ, যে অনাস্থার কৌশল একসময় শেহবাজ নিজে ব্যবহার করেছিলেন, সেই একই অস্ত্র এখন তার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
ক্ষমতার কারিগর এখন কোণঠাসা
শেহবাজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নও) আপাতদৃষ্টিতে সরকারে থাকলেও, ভেতরে ভেতরে শুরু হয়েছে ভাঙনের সুর। দলীয় অস্থিরতা, নেতৃত্বে দ্বিধা ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগ—সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাচ্ছে।
রাজনীতির মঞ্চে সেই পুরনো দৃশ্যপট—একটি পক্ষ ক্ষমতা হারিয়েছে, আরেকটি পক্ষ তা ফিরিয়ে নিতে মরিয়া। ইমরান খানের বিরুদ্ধে সাজানো রাজনৈতিক নাটকের পটভূমি এবার যেন উল্টে গিয়ে শেহবাজ শরীফকে কেন্দ্র করে নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে শিগগিরই এক নতুন মোড় আসতে চলেছে, যেখানে পুরনো কুশীলবেরাই এবার নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে চক্রান্ত, প্রতিশোধ এবং ক্ষমতার লড়াই যেন এক অনন্ত নাট্যগাথা। আজ যারা শাসক, কাল তারাই হয়তো বিচারের কাঠগড়ায়। ইমরান খানকে সরাতে গিয়ে যে ফাঁদ পেতেছিল শেহবাজের দল, সেই ফাঁদেই যদি এবার তিনি নিজেই আটকে পড়েন—তবে এটাই হবে রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় পালাবদল। এই পরিস্থিতির ওপর এখন চোখ রাখছে শুধু পাকিস্তান নয়, সারা উপমহাদেশ।