ইজ়রায়েলের নজরে কি ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটি? হামলার আশঙ্কা! নেপথ্যে কি কলকাঠি নাড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্টে চাঞ্চল্য! ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিতে ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার তথ্য সামনে এসেছে। এই হামলার পেছনে কি যুক্তরাষ্ট্রের গোপন ইশারা? উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে তেহরান-ওয়াশিংটন-তেল ..

মধ্যপ্রাচ্য আবারও জ্বলতে বসেছে। ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটি নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। সম্প্রতি সিএনএন এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ইঙ্গিত দিয়েছে—ইসরায়েল যে কোনো সময় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে সামরিক হামলা চালাতে পারে। এই সম্ভাবনা দিনে দিনে বাস্তবের দিকে এগোচ্ছে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, গত কয়েক মাসে ইরানের অভ্যন্তরে পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার ওপর ইসরায়েল নজরদারি জোরদার করেছে। বিশেষ করে সেইসব স্থানে যেখান থেকে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে বলে পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ রয়েছে।

তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই হামলার পেছনে কি কেবলমাত্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার উদ্বেগ, নাকি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে এর নেপথ্যে?

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ও আমেরিকার মধ্যকার পরমাণু চুক্তি নিয়ে চলমান জটিলতা এই হামলার সম্ভাবনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। যদিও ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চুক্তিতে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তবু ইরান তার অবস্থান থেকে একচুলও সরেনি।

জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে একটি চিঠি পাঠান, যেখানে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে তেহরান সেই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দেয়—ধমক বা হুঁশিয়ারিতে তারা মাথা নত করবে না, এবং কোনো চাপের মুখে চুক্তি স্বাক্ষর করবে না।

এরপরই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA)-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন। তাঁর মতে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করেই হোয়াইট হাউজের চাপ বেড়েছে তেহরানের ওপর।

এমন এক সময় যখন ইসরায়েল বারবার ইরানের পারমাণবিক কার্যকলাপকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য "প্রত্যক্ষ হুমকি" হিসেবে দেখছে, তখন এ ধরনের হামলার প্রস্তুতির খবর নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবু সামরিক মহলের কার্যকলাপ থেকে স্পষ্ট—এই ঝুঁকি কেবল সম্ভাবনা নয়, একেবারে বাস্তব হতে চলেছে।

এই সংঘাতের ফলাফল যে কেবল ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কেই প্রভাব ফেলবে তা নয়—এর প্রভাব পড়বে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে, এমনকি বৈশ্বিক রাজনীতির ওপরও। কারণ, এই সংঘাতের মাঝে পড়ে যেতে পারে সৌদি আরব, ইরাক, সিরিয়া সহ একাধিক প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সেই সঙ্গে তেলের বাজারে অস্থিরতা, বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস, এবং পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে এই প্রশ্নকে ঘিরে—ইরান যদি সত্যিই ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হয়, তবে সেই যুদ্ধ কেবল আঞ্চলিক থাকবে তো? নাকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটবে এখান থেকেই?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে কূটনৈতিক আলোচনার বিকল্প নেই। কিন্তু ইরান ও আমেরিকা কেউই যদি নিজেদের অবস্থান থেকে না সরেন, তাহলে যুদ্ধের ঘন্টা যে কোনো সময় বেজে উঠতে পারে।

শেষ কথা:
বিশ্ব যখন শান্তির খোঁজে, তখন এই নতুন উত্তেজনা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে—পরমাণু শক্তি যখন রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে ওঠে, তখন ধ্বংসের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। এখন দেখার, এই সম্ভাব্য আগুনে কে আগে ঘি ঢালে—তেহরান, তেল আবিব না ওয়াশিংটন?

没有找到评论