close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ঈদের পর বাজারে আগুন, সিন্ডিকেটের ফাঁদে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও ঈদের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। সিন্ডিকেটের কৌশলে আলু, ডিম, ডাল থেকে শুরু করে মাছ, মসলা—সবকিছুর দাম বাড়ছে নীরবে। ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে মধ্যবিত্ত..

ঈদের পর থেকেই রাজধানীজুড়ে নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে পণ্যের দাম। বাজারে সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, তবু দাম বাড়ানো হচ্ছে কৌশলে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুরনো সেই সিন্ডিকেট, যারা পণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও দামের ওপর কৃত্রিম চাপ তৈরি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগসহ একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু, ডাল, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাছ, মসলা—সবকিছুর দাম ঈদের আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

উল্লেখযোগ্য দামের পরিবর্তন:

  • এক সপ্তাহ আগে ২৫ টাকায় বিক্রি হওয়া আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

  • মসুর ডাল ১৩৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪০ টাকা।

  • ফার্মের ডিম ডজনপ্রতি ১২৮-১২৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৫-১৩৬ টাকা।

  • বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৮০ টাকা—যা ঈদের আগে ছিল ১৬৮ টাকা।

নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম নামে এক ভ্যানচালক বলেন,
“রোজায় কিছুটা দাম কম থাকলেও এখন প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। গরিব মানুষ তো মাছ, মাংস কিনতেই পারে না—এখন তো ডাল, আলু, ডিমও কিনতে কষ্ট হচ্ছে।”

মূল্যবৃদ্ধির ব্যপ্তি শুধু এখানে থেমে নেই। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলার দামেও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

  • দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা।

  • দেশি রসুন ১৬০ টাকা, আর আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকা প্রতি কেজি।

  • আদার কেজি ১০০ থেকে ২০০ টাকায়, মান অনুযায়ী পরিবর্তন হচ্ছে।

  • হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪২০ টাকা কেজি।

  • জিরা ৬৫০-৭৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, ছোট এলাচ ৫১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারেও আগুন—যেখানে সাধারণ মানুষের নজর থাকে সবচেয়ে বেশি।

  • টমেটো ৬০-৬৫ টাকা কেজি (আগে ৫০-৬০ টাকা)

  • পেঁপে ৬০ টাকা (আগে ৫০ টাকা)

  • শসা ৬০-৭০ টাকা (আগে ৫০-৬০ টাকা)

  • কাঁচামরিচ ১২০ টাকা (ঈদের আগে ছিল ৮০ টাকা)

  • প্রতিটি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকা

মাছের বাজারে তো অবস্থা আরও খারাপ। সরবরাহ সংকটের কথা বলে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে চলেছে।

  • পাঙাশ ২০০-২২০ টাকা (আগে ১৮০-১৯০ টাকা)

  • তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা (আগে ২০০ টাকা)

  • সরপুঁটি ২২০-২৩৫ টাকা

  • চাষের কই ২৫০ টাকা

  • মাঝারি রুই ৩০০-৩২০ টাকা, বড় রুই ৩৫০-৪০০ টাকা

  • কাতলা ৩০০-৩৫০ টাকা

  • চাষের চিংড়ি ৬৫০-৭৫০ টাকা, নদীর চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকা

  • শিং মাছ ৮৫০-৯০০ টাকা, ট্যাংরা ৭০০-৮০০ টাকা

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন জানান,
“পণ্যের দাম বাড়লে উচ্চবিত্তের সমস্যা না হলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। বাজার তদারকি জোরদার না হলে এই চক্র বারবার একই কৌশলে দাম বাড়িয়ে যাবে। ঈদের সময় যেভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল, তেমনটা নিয়মিতই প্রয়োজন।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অস্থিরতার পেছনে মূলত সিন্ডিকেটের কারসাজিই দায়ী। কারণ বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়ানো হচ্ছে। বাজার তদারকিতে সরকারি সংস্থাগুলোর দুর্বল ভূমিকা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব সিন্ডিকেটের সাহস আরও বাড়িয়ে তুলছে।


এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো—বাজার তদারকি জোরদার করা, মনিটরিং বাড়ানো এবং দায়ী সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।

Hiçbir yorum bulunamadı