ই স রা য়েল -ই রা ন ১২ দিনের যুদ্ধ কি সত্যিই শেষ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলেও থামেনি হামলা। কে জিতল, কে হারল—কেউই নিশ্চিত নয়। আবার কি নতুন রণক্ষেত্র অপেক্ষা করছে মধ্যপ্রাচ্যে?..

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতিতে এক ভয়াবহ অধ্যায় যুক্ত হলো—ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এক অনিশ্চিত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে এই সংঘর্ষের আপাত সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু এই যুদ্ধ কি সত্যিই শেষ? নাকি এটা কেবল বড় কিছু ঘটার আগে এক ক্ষণিক বিরতি?

সবকিছু শুরু হয় এক চরম উত্তেজনার রাত থেকে। ইসরায়েলের গোপন অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়—ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান। ট্রাম্প একে "সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক" হামলা বলে অভিহিত করেন। আর এটাই ছিল যুদ্ধের সূচনা।

ইরান জবাব দিতে দেরি করে না। আল-উদেইদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা। মুহূর্তেই গোটা মধ্যপ্রাচ্য রণাঙ্গনে পরিণত হওয়ার পথে। যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, "এই যুদ্ধ কয়েক বছর চলতে পারত, কিন্তু আমরা তা থামিয়েছি।" তিনি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন Truth Social-এ।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইসরায়েল দাবি করে, ইরান থেকে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তার আকাশসীমায় প্রবেশ করে, যদিও সেগুলো সফলভাবে ভূপাতিত করা হয়। জবাবে ইসরায়েলও হামলা চালায়—তেহরানের কাছে একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস করে। ট্রাম্প এতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করেন, “ওরা জানেই না কী করছে!” তবে ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

যুদ্ধবিরতি পুনর্বহাল হলেও পরিস্থিতি ছিল আগুনের নিচে ছাইয়ের মতো—শান্ত, কিন্তু অস্থির।

ইসরায়েল এই প্রথমবারের মতো তেহরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালাতে সক্ষম হয়। নেতানিয়াহু একে “অগ্রিম আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ” হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েল প্রমাণ করতে পেরেছে যে, তারা দীর্ঘ দূরত্বে জটিল সামরিক মিশন চালাতে সক্ষম। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি এই আক্রমণে জড়াতে পারাটা ইসরায়েলের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে স্বাধীন কোনো উৎস থেকে এই দাবি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে বলেছেন, “ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা নির্ধারণ করতে মাটির নিচে তদন্ত প্রয়োজন।”

অন্যদিকে, ইরানের পরমাণু সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামী দাবি করেন, “আমাদের আগাম প্রস্তুতির ফলে উৎপাদন বা সেবায় ব্যাঘাত ঘটেনি।”

তবে আন্তর্জাতিক মহলে ইরানের আসল ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা শান্তিচুক্তি নয়। ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। এমনকি ২৪ জুন ইরানের পার্লামেন্ট আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের একটি বিলও পাস করেছে।

এখন ইরানের শেষ কূটনৈতিক ভরসা ইউরোপীয় দেশগুলো। কারণ, রাশিয়ার ওপর আস্থা করার পরিস্থিতি আর নেই। তবে ইসরায়েল বলেছে, তারা কোনো নতুন পরমাণু চুক্তিকে মানবে না। অন্যদিকে, ইরানও ট্রাম্পের অতীত প্রতারণা ও হামলার কারণে পশ্চিমাদের প্রতি গভীর অবিশ্বাস প্রকাশ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন যুদ্ধ এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। যদি যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতির পথে না ফিরে এবং ইরান সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, তবে সংঘর্ষ আবার শুরু হতে পারে। পরবর্তী লড়াইয়ের ময়দান হতে পারে আরও বিস্তৃত, আরও ভয়াবহ।

এবার যুদ্ধ কেবল ইসরায়েল-ইরানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—সহজেই এতে জড়িয়ে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও দেশ।

১২ দিনের এই যুদ্ধ এক ঐতিহাসিক সংঘর্ষের উদাহরণ হয়ে থাকবে—যেখানে সবাই দাবি করছে বিজয়ের, অথচ বাস্তবতা বলছে, কেউই পুরোপুরি জিতেনি। যুদ্ধবিরতি হয়েছে, কিন্তু আগুন এখনও জ্বলছে নিঃশব্দে।

এটা থেমে যাওয়া যুদ্ধ নয়, এটা হতে পারে এক বড় বিস্ফোরণের পূর্বাভাস। মধ্যপ্রাচ্য আবারও উত্তপ্ত, বিশ্ব শ্বাসরুদ্ধ।

Aucun commentaire trouvé