ই স রা য়ে ল-ই রান যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইরানিদের মাঝে হতাশা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও ইরানে ঘরে ঘরে আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা ও হতাশা। সাধারণ মানুষ বলছে, শান্তির নামে চলছে কূটনৈতিক খেলা—ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বাইরের শক্তির ইচ্ছার ওপর।..

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে ইরানজুড়ে হতাশা ও ভয়: জনগণ বলছে, ‘শান্তি নয়, শুধু বিরতি’

টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি বিমান হামলার পর মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করে ঘোষণা আসে “ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতি”। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে এক “বড় কূটনৈতিক সাফল্য” হিসেবে ঘোষণা দিলেও, ইরানের অভ্যন্তরে রয়েছে তীব্র আশঙ্কা, হতাশা ও অসহায়ত্বের সুর।

তেহরানের ৩৭ বছর বয়সী সাংবাদিক সামানেহ বলেন, “সোমবার রাতের বোমাবর্ষণ ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। মনে হয়েছিল, এবার বুঝি আর বাঁচব না, প্রিয়জনদেরও আর দেখতে পাব না।”

যুদ্ধবিরতির খবরে কিছুটা স্বস্তি মিললেও, এটি যে দীর্ঘস্থায়ী হবে না—তা নিয়েই বিশ্বাস সংকটে ভুগছেন তিনি। সামানেহের বক্তব্য, “ট্রাম্প আমাদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলছেন। এই চুক্তি এত হঠাৎ কেন? ইসরায়েল ও ইরান এমন সহজে একমত হতে পারে, এটা কল্পনাও করতে পারি না।”

যদিও ওমান থেকে পাঠানো ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তায় সামানেহ খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন, কিন্তু আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি।

তেহরানের পাশের শহর কারাজের ইতিহাস শিক্ষক রাহা বললেন, “এটা কোনো শান্তি নয়, এটা কেবল একটা সাময়িক বিরতি। ইসরায়েল ও আমেরিকা একদিকে আমাদের সরকার পরিবর্তনের কথা বলে, আবার অন্যদিকে শান্তির গান গায়—তাদের বিশ্বাস করব কীভাবে?”

রাহার মতে, “আমাদের ওপর বোমা ফেলছে, আমাদের পরমাণু স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে, কোটি কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে—আর এদিকে তারা নারী স্বাধীনতার কথা বলে। দ্বিমুখী আচরণ আমাদের জন্য বিপজ্জনক।

দক্ষিণ ইরানের আহওয়াজ শহরের ৪২ বছর বয়সী প্রকৌশলী হাদি বলেন, “ইরান বহুবার জানিয়েছে, আমরা পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাই না। কিন্তু ২০১৫ সালের চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ট্রাম্প আমাদের সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এত শহীদ হারালাম, অথচ শান্তি তো দূরের কথা—আমাদের আজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।”

হাদি মনে করেন, এই সঙ্কটে সরকারেরও কিছু বিষয়ে নমনীয় হওয়া উচিত, বিশেষ করে সামাজিক স্বাধীনতা নিয়ে।

ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইয়াজদ শহরের ২৮ বছর বয়সী নার্স মোহাম্মদ বলেন, “যুদ্ধবিরতি হয়েছে, এটা জেনে ভালো লাগছে। কিন্তু এটা টিকবে—সেই বিশ্বাস নেই।”

তিনি বলেন, “এই যুদ্ধের কোনো পক্ষই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমেরিকা এক রাতে আমাদের প্রজন্মের সম্পদ ধ্বংস করেছে, আর ইসরায়েল আমাদের বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে। এত সহিংসতার পর কীভাবে বিশ্বাস করব?”

মঙ্গলবারের আগে রাতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় তেহরানে অন্তত ৯ জন নিহত হন। শহরজুড়ে সকালে যুদ্ধবিরতির খবরে স্বস্তি থাকলেও, সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও আতঙ্ক ছড়াতে থাকে দ্রুত।

ইতিহাস শিক্ষক রাহা জানান, “আমাদের সরকার যদি এই যুদ্ধকে নিজের পরাজয় বলে ভাবে, তবে দেশের অভ্যন্তরে নিপীড়ন আরও বাড়বে। নারীদের ওপর আরও কঠোরতা, আরও ধরপাকড় হতে পারে।”

২০২২ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে যেভাবে নাগরিকদের দমন করা হয়েছিল, সেই পুরনো ভয় আবার ফিরে আসছে ইরানিদের মনে। ইতিমধ্যে সরকার কয়েক ডজন মানুষকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।

রাহা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যুদ্ধ করিনি, তবুও আমরা মূল্য দিচ্ছি—জীবনের, স্বাধীনতার, ভবিষ্যতের।”

যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও ইরানে শঙ্কা কাটেনি। সাধারণ মানুষের চোখে এটি কেবল একটি কৌশলগত বিরতি, শান্তির কোনো স্থায়ী নিশ্চয়তা নয়। বাইরের শক্তির সিদ্ধান্তই এখন নির্ধারণ করছে ইরানিদের ভবিষ্যৎ—এটাই তাদের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক।

Ingen kommentarer fundet