close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ই রা নে ট্রা ম্পে র হা ম লা যেভাবে উত্তর কোরিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানে ট্রাম্পের সামরিক আঘাত কিম জং উনকে আরও আগ্রাসী করে তুলছে। পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধি ও রাশিয়ার সহযোগিতায় উত্তর কোরিয়া বিশ্ব নিরাপত্তায় নতুন হুমকি হয়ে উঠছে।..

ইরানে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বোমারু বিমান হামলার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, তার ঢেউ আছড়ে পড়েছে পূর্ব এশিয়ায়ও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আঘাত উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিকে আরও গতিশীল এবং বিপজ্জনক করে তুলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ পিয়ংইয়ং-এর কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে: নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে পারমাণবিক শক্তি হতে হবে ‘চূড়ান্ত প্রতিরোধক’। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস এটি আরও দৃঢ় হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা উত্তর কোরিয়াকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসতে চাপ দিয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থতা—কিম প্রশাসনের গোপন ও প্রকাশ্য উদ্যোগেই বোঝা যায় যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্রকে নিজেদের ‘বেঁচে থাকার অস্ত্র’ হিসেবে দেখছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিম ইউল-চুল বলেন, “ট্রাম্পের ইরানে বিমান হামলা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নীতিকে আরও আগ্রাসী করে তুলবে। তারা এখন এটিকে পূর্বপরিকল্পিত হুমকি হিসেবে দেখছে।”

তিনি সতর্ক করেন, এ হামলার পর উত্তর কোরিয়া এখন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়নে আরও জোর দেবে এবং একপ্রকার যুদ্ধ প্রস্তুতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। সামরিক সরঞ্জাম, যৌথ মহড়া এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে এই জোট আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

জাতিসংঘের মাল্টিল্যাটারাল স্যাংশনস মনিটরিং টিম (MSMT) জানায়, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে সহায়তা করতে ১৪ হাজারের বেশি সেনা ও বিপুল সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। বিনিময়ে রাশিয়া তাদের দিয়েছে অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ প্রযুক্তি ও পরিশোধিত জ্বালানি।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (CSIS)-এর বিশ্লেষক ভিক্টর চা বলেন, “ইরান, লিবিয়া, ইরাক—যেসব দেশ পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়ে, তারা মার্কিন হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে। কিম এই উদাহরণগুলোকে বিশ্লেষণ করে বুঝেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রই তাকে নিরাপদ রাখবে।”

উত্তর কোরিয়া ইতোমধ্যেই ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) প্রস্তুত রেখেছে, যেগুলো মার্কিন মুলভূখণ্ডেও আঘাত হানতে সক্ষম।

যেখানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনও কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়নি, সেখানে উত্তর কোরিয়ার হাতে রয়েছে ৪০ থেকে ৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। ইরান এখনও কূটনৈতিক আলোচনায় ব্যস্ত, আর পিয়ংইয়ং এখন যুদ্ধ সক্ষমতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সিউলের ইওহা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিফ এরিক ইজলি বলেন, উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র সিস্টেম অনেক বেশি পরিপূর্ণ এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত।

উত্তর কোরিয়ার ওপর মার্কিন হামলা শুধু অঞ্চল নয়, পুরো বিশ্বকে টেনে নিতে পারে এক ভয়ঙ্কর পারমাণবিক যুদ্ধের মুখে। লিম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি হামলা চালায়, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া সেটা আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করবে।”

তাছাড়া, রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে, যা রাশিয়াকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুদ্ধের মাঠে নামার অধিকার দেয়। ফলে, একক কোনো সিদ্ধান্ত হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সংঘাতের সূচনা ঘটাতে পারে।

এই প্রশ্ন এখন কূটনৈতিক মহলের প্রধান আলোচ্য বিষয়। লিম ইউল-চুল বলেন, “ইরানে হামলা বিশ্বের কাছে একটি ভুল বার্তা দিচ্ছে। এটি প্রমাণ করছে, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই বেঁচে থাকা সম্ভব।”

এই বার্তা কিম জং উনের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও দৃঢ় করছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে আরও গভীর সামরিক অংশীদারত্বে প্রেরণা জোগাচ্ছে।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা হয়তো পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সঠিক পদক্ষেপ’ মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই হতে পারে আগামী দিনের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতির সূচনা। উত্তর কোরিয়া এখন কেবল একক রাষ্ট্র নয়, বরং একটি পারমাণবিক জোটের মুখপাত্র হয়ে উঠছে—যেখানে রাশিয়া রয়েছে তার পাশে, অস্ত্র আর প্রযুক্তি হাতে।

Tidak ada komentar yang ditemukan