মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন চূড়ান্ত সীমায়, তখন এক নতুন বার্তা দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করা একটি ভিডিওতে তিনি ইঙ্গিত দিলেন—ইসরায়েলের ওপর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুধুমাত্র সামরিক জবাব নয়, বরং এটি একটি "সম্মানের বার্তা", যা বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত ও গর্বিতদের হৃদয়ে আশার আলো জ্বালিয়েছে।
ভিডিওটির শুরুতে দেখানো হয়েছে গাজার ধ্বংসস্তূপ, যেখানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিরীহ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুর আর্তনাদ দেখা যায়। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের পরই ফুটেজে আসে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য। দেখা যায়—আকাশ ছেঁয়ে ফেলা ক্ষেপণাস্ত্র, বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠা ইসরায়েলি শহর, আর এরপরই ধ্বংসস্তূপে পরিণত কিছু লক্ষ্যবস্তু।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিশ্বের সম্মানিত মানুষদেরকে আনন্দিত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, খামেনির এই বার্তা কেবল প্রতিরোধের ভাষা নয়—এটি একধরনের কৌশলগত মনস্তাত্ত্বিক বার্তা, যা বিশ্বের মুসলিম সমাজসহ ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতাকারী বহু জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বরাবরই ফিলিস্তিন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছেন। তবে এই ভিডিও পোস্ট সেই বক্তব্যেরই একটি দৃশ্যমান রূপ, যা ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভিডিওর মাধ্যমে ইরান বিশ্বকে একটি বার্তা দিয়েছে—“আমরা শুধু নিন্দা করে থেমে থাকি না, জবাব দিতেও জানি।
এই ভিডিও প্রকাশের পরপরই একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যেমন আল-জাজিরা, প্রেস টিভি এবং রাশিয়া টুডে ভিডিওটির বার্তা বিশ্লেষণ করে জানায়—ইরানের এই বার্তা শুধু সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শন নয়, এটি রাজনৈতিক কূটনীতির অংশও বটে।
বিশ্বজুড়ে অনেক ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ জনগণ এই ভিডিওর বার্তা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ‘#IranMissiles’, ‘#Resistance’ ট্রেন্ড করেছে দীর্ঘ সময়।
বিশ্লেষণ: এই বার্তা ভবিষ্যতের কৌশলগত রূপরেখা?
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান আসলে এই ভিডিওর মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রতিরোধ যুদ্ধের কৌশলগত ধারণা উপস্থাপন করছে। আয়াতুল্লাহ খামেনি সম্ভবত শুধু ফিলিস্তিন নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধ আন্দোলনকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টায় রয়েছেন।
তারা বলছেন, এই ভিডিও একটি "মোরাল জয়" বা নৈতিক বিজয়ের প্রতিনিধিত্ব করে, যা বাস্তবতা যতই কঠিন হোক না কেন, প্রতিরোধের নীতিতে বিশ্বাস রাখা জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ী।
ইরান যে শুধু সামরিক শক্তিতে নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত বার্তায়ও বিশ্বের মুসলিম ও নিপীড়িত সমাজের মন জয় করতে চায়—এই ভিডিও এবং খামেনির মন্তব্য তারই বড় প্রমাণ। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এই ধরনের বার্তা শুধু একটি দেশের সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং তা হয়ে উঠছে একটি প্রতিরোধ-ভিত্তিক আদর্শের প্রতীক।