শনিবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে তিনি ‘উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি’ বলে উল্লেখ করেছেন।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে এএফপি-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই হামলা এমন একটি অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে, যা ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীলতায় ভুগছে। এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে ভয়াবহ সংকট ডেকে আনতে পারে।
তিনি বলেন, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। এর কোনো সামরিক সমাধান নেই। একমাত্র সমাধান কূটনৈতিক পথেই সম্ভব।
গুতেরেস আরো বলেন, যুদ্ধ নয়, শান্তিই হতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লক্ষ্য। উত্তেজনা না বাড়িয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন করতে হবে। ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েরই উচিত সংলাপে ফিরে যাওয়া, নতুবা এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরাও এই ঘটনাকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ‘নতুন অধ্যায়’ বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, ইরানের ভেতরে এ ধরনের হামলা শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, এর রয়েছে মারাত্মক কৌশলগত প্রভাব। এতে করে শুধু ইরান-যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন এক অস্থিরতার ঢেউ বয়ে যেতে পারে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনার জের ধরে হরমুজ প্রণালীতে নিরাপত্তা জটিলতা বাড়তে পারে, যা বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
অন্যদিকে, ইরান সরকার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই আগ্রাসনের জবাব ইরান দেবে, তবে সেটা কৌশলগত সময় ও জায়গা নির্বাচন করে।
জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে পরোক্ষভাবে সকল রাষ্ট্রকে এই পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, “বিশ্ব এখন এমন এক সময়ে পৌঁছেছে যেখানে একটি ভুল পদক্ষেপই ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়। তাই প্রতিটি পক্ষের উচিত সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করা।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। জাতিসংঘের উদ্বেগ এই বার্তাই দিচ্ছে—এই মুহূর্তে সামরিক শক্তির প্রদর্শন নয়, বরং শান্তির পথে হাঁটাই মানবতার ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র ভরসা।