close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ই রা নে ই স রা য়ে ল যেভাবে ধরা খেল

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানে ১১ দিনের ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ব্যর্থ কৌশল, পরমাণু কর্মসূচির ক্ষতি হয়নি। উল্টো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ইরান—এটাই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় চমক।..

মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তাল যুদ্ধের আবহ। ১১ দিন ধরে চলা ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলা কেবল ব্যর্থই হয়নি, উল্টো ইরানকে আরও শক্তিশালী ও সংগঠিত করে তুলেছে। ইসরায়েল যে লক্ষ্য নিয়ে হামলা শুরু করেছিল, তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, বরং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ইসরায়েল তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করেছে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। শুরুতেই তিনি দুইটি উদ্দেশ্যের কথা বলেছিলেন—ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস এবং শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন। দুটোর কোনোটাই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

ফার্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় হামলা চালালেও ইরান আগেই সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভাজ্য পদার্থ সরিয়ে নেয়। এটি ছিল তাদের পরমাণু কর্মসূচির হৃদয়। ফলে পুরো অপারেশন কার্যত নিষ্ফল। ইউরেনিয়ামের মজুদ অক্ষত থাকায় ইরান তার পরমাণু কার্যক্রম আগের মতোই চালিয়ে যেতে পারবে।

ইসরায়েল বাংকার বাস্টার বোমা ব্যবহার করে কিছু ক্ষতি করলেও ইরানের স্থাপনায় প্রকৃত কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আজও অজানা। কারণ ইরান এখনো আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সেসব স্থাপনায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।

ইসরায়েল চেয়েছিল ইরানের সামরিক নেতৃত্বে আঘাত হেনে একপ্রকার গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে। তাদের বিশ্বাস ছিল, ‘টপ লিডার’ হত্যার মাধ্যমেই শাসনব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলা সম্ভব। কিন্তু ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, এই কৌশল কার্যকর নয়।

আইআরজিসি'র জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যা করে তারা মনে করেছিল ইরান অস্থিতিশীল হবে। কিন্তু উল্টো ঘটেছে—ইরানি জনগণ সরকারের প্রতি ঐক্যবদ্ধ সমর্থন জানিয়েছে। এমনকি যারা আগে সরকারবিরোধী ছিলেন, তারাও এবার ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।

এভিন কারাগার, যেখানে রাজবন্দিদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে—সেই কারাগারে বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ভাবল, তারা মানবাধিকার রক্ষা করছে। কিন্তু বাস্তবে বন্দিদের অবস্থা আরও করুণ হয়েছে। তাদের অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তেহরানে ‘ডুমসডে ক্লক’-এ হামলা কিংবা আইআরআইবির টেলিভিশন ভবনে বোমাবর্ষণ—সবই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কেবল হাস্যরসের খোরাক হয়েছে। বরং এখন এই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েল কেন এসব হাস্যকর কৌশলে লিপ্ত হলো?

যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরুতে হামলায় যুক্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে তাদের বোমারু বিমান সরিয়ে নেওয়া হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইরানের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেন। জার্মান চ্যান্সেলর মের্ৎসসহ কয়েকজন পশ্চিমা নেতা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার মেনে নিলেও তাদের কেউ ইসরায়েলের চরম দাবি—ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করে—তা সমর্থন করেননি।

এই স্বল্পমেয়াদি কিন্তু ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষে ইরান নিজেকে শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে তুলে ধরেছে। যুদ্ধবিরতির পর বিশ্ব এখন ইরানকে বৈধ অংশীদার হিসেবে দেখছে। মধ্যপ্রাচ্যের উন্নয়নে ইরানকে বাদ দিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়—এই বার্তা স্পষ্ট।

ইরান জানিয়েছে, তারা ‘নো নিউক্লিয়ার ওয়েপনস’ নীতিতে আগ্রহী, যা বিশ্বজনমতের কাছেও ইতিবাচক বার্তা। এটি ইসরায়েলের কৌশলগত ব্যর্থতার বড় প্রমাণ।

যুদ্ধের শুরুর দিকে ইসরায়েল আকাশে আধিপত্য দেখালেও, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তাদের ঢাকনা উল্টে দেয়। একের পর এক আঘাতে তেল আবিব ও জেরুজালেম কাঁপতে থাকে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত ফুরিয়ে আসে। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়, জনজীবন অচল হয়ে পড়ে।

যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু তার প্রতিধ্বনি রয়ে গেছে। ইরান মাথা নত করেনি, বরং আরও দৃঢ় হয়েছে। ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট, তারা আর আগের ইরানের মুখোমুখি নয়—এবার তারা নতুন এক ইরানের মুখোমুখি।

এ যুদ্ধ থেকে ইরান একটিই বার্তা দিয়েছে: “আমরা সব ভুলবো না, কিছুই ক্ষমা করবো না।”
আর সেটিই ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক।

Walang nakitang komento