যুদ্ধাবস্থার মুখোমুখি ইরান থেকে পালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বহু বিদেশি নাগরিক। এমন পরিস্থিতিতে একটি আশার আলো হয়ে এসেছে কুয়েত সরকারের সদ্য গৃহীত সিদ্ধান্ত—ইরানে আটকে থাকা বিদেশিদের জন্য দেওয়া হচ্ছে ৭ দিনের ট্রানজিট ভিসা। এই সিদ্ধান্ত শুধু তাৎক্ষণিক মুক্তির পথ খুলে দিয়েছে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্থির পরিবেশে মানবিকতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছেন কুয়েতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ ফাহাদ আল ইউসুফ। তার সরাসরি নির্দেশেই কার্যকর করা হয়েছে এই বিশেষ ব্যবস্থা, যার আওতায় মূলত জিসিসি (GCC) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নাগরিক এবং ইউরোপীয় বিদেশিরা উপকৃত হবেন।
এই ভিসা শুধুমাত্র তাদের জন্য, যারা ইরান থেকে স্থলপথে ইরাক হয়ে কুয়েতে প্রবেশ করছেন এবং কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে অন্যত্র যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
আবদালি সীমান্তের পরিচালক কর্নেল ওয়ালিদ আল-আজমি জানিয়েছেন, এই বিশেষ ট্রানজিট ভিসাটি ৭ দিনের জন্য বৈধ থাকবে এবং এ সময়সীমার মধ্যেই বিদেশিরা তাদের পরবর্তী ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে একজন ভ্রমণকারী দ্রুত ও নিরাপদে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
এই উদ্যোগ শুধুই ভিসা প্রদানে সীমাবদ্ধ নয়। আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে, কুয়েত সরকার নিশ্চিত করছে কূটনৈতিক সহায়তা ও প্রতিনিধিত্ব। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা সরাসরি সীমান্তে উপস্থিত থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের গ্রহণ ও সহায়তা করবেন।
এছাড়া কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মীরাও আবদালি বন্দরে কাজ করছেন বিশেষ কিছু ব্যতিক্রম প্রয়োগ করে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ করতে। এতে করে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের দীর্ঘ হয়রানি বা অনিশ্চয়তায় পড়তে হচ্ছে না।
যেখানে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও সীমান্ত সুরক্ষার নামে মানুষদের আটকে রাখা হচ্ছে, সেখানে কুয়েতের এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবিকতারও এক অনন্য উদাহরণ।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কুয়েত আবারও প্রমাণ করল যে, তারা আন্তর্জাতিক মানবিক দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। বিশেষত যুদ্ধ বা সংকটকালে আটকে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো একটি সভ্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব—এবং কুয়েত সেই দৃষ্টান্তই স্থাপন করল।
ইরানে আটকে পড়া বিদেশিদের জন্য এই ৭ দিনের ট্রানজিট ভিসা একমাত্র ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা জীবন বাঁচাতে চান, নতুন দেশে পাড়ি জমাতে চান, বা নিজ দেশে ফিরতে মরিয়া—তাদের জন্য কুয়েত হয়ে উঠেছে এক ‘ট্রানজিট মুক্তি’ কেন্দ্র।
এই সিদ্ধান্ত কেবল কূটনৈতিক নয়, এক মানবিক বিপ্লব। কুয়েত আজ সেই উদাহরণ রাখল যে সংকটকালেও ‘মানুষ’ হয়ে ওঠাই সবচেয়ে বড় পরিচয়।



















