ইরান ও ফিলিস্তিনের ভূমিতে দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবি চত্বর। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে ইসরাইলের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে প্রতীকী প্রতিবাদ জানানো হয়।
এই প্রতিবাদ সভা ও মিছিলের মূল বার্তা ছিল— মুসলিম বিশ্বকে আর নীরব থাকার সুযোগ নেই। সময় এসেছে সামরিক সহযোগিতা, অস্ত্র ও মানবসম্পদ দিয়ে ফিলিস্তিন-ইরানকে সহায়তা করার।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান। সেখানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, ঢাবিতে অধ্যয়নরত পাকিস্তানি ছাত্র মোহাম্মদ তাহের, ও মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আহ্বায়ক রাকিব মণ্ডল।
মোহাম্মদ শামসুদ্দীন তার বক্তব্যে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “যে সংগঠন মুসলিমদের সুরক্ষা দিতে পারে না, সেখানে আশার কিছু নেই। জাতিসংঘে মুসলিম দেশগুলোর কোনো ভেটো ক্ষমতা নেই— ফলে প্রতিটি ইসরাইলবিরোধী প্রস্তাবেই বাধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি আরও বলেন, “ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ার পর এখন ইরানকে টার্গেট করা হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য মুসলিম শক্তিকে ধ্বংস করা। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ মুসলিম উম্মাহ-ই এই আগ্রাসনের জবাব দিতে পারে।
শামসুদ্দীন সতর্ক করে বলেন, “ভারতকে ইরান যখন চাবাহার বন্দর ব্যবহার করতে দিয়েছিল, তখনই সেই সুযোগে ভারতীয় গোয়েন্দারা ইরানের তথ্য ফাঁস করে দেয় ইসরাইলকে। এই বিশ্বাসঘাতকতার ফলেই ইরানিদের হত্যাকাণ্ড ঘটে।”
তিনি বলেন, “এখন আফগানিস্তান যদি ভারতের সঙ্গে অতিমাত্রায় সখ্যতা গড়ে তোলে, তাহলে তাদের ভাগ্যেও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
বক্তা সাইয়েদ কুতুব বলেন, “ইসরাইল এখন আর শুধু ফিলিস্তিনের শত্রু নয়, বরং প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসরাইলি প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি ও হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “ইসরাইল মানবতাবিরোধী রাষ্ট্র। এটি এখন বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে।
আবদুল ওয়াহেদ বলেন, “আজ যখন ইসরাইল ফিলিস্তিনের পর ইরানকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে, তখন বাংলাদেশসহ প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রের উচিত হবে— ফিলিস্তিন ও ইরানকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা।”
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন বাংলাদেশ জাতিসংঘে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রস্তাব উত্থাপন করে এবং ইরানকে সামরিক সহায়তা দেয়।
ঢাবিতে অধ্যয়নরত পাকিস্তানি ছাত্র মোহাম্মদ তাহের বলেন, “ইসরাইলের টার্গেট হলো ‘গ্রেটার ইসরাইল’ গঠন। এই পরিকল্পনায় সবচেয়ে বড় বাধা হলো ইরান ও পাকিস্তান। এই দুটি রাষ্ট্র যদি ধ্বংস হয়, তাহলে মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাবে।”
রাকিব মণ্ডল বলেন, “ইসরাইল একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্র। এটি মুসলমানদের নিধনে নেমেছে। যদি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এখনই জাগ্রত না হয়, তাহলে একে একে সবকটিই ইসরাইলের আগ্রাসনের শিকার হবে।
বিক্ষোভ শেষে একটি মিছিল কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, কলাভবন হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে শেষ হয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখর ছিল পুরো চত্বর— ‘ইসরাইল নিপাত যাক’, ‘ফিলিস্তিন-ইরান জিন্দাবাদ’, ‘মুসলিম ঐক্য চাই’।
এই প্রতিবাদ যেন ছিল গোটা মুসলিম উম্মাহর অন্তরের ধ্বনি — “আর নয় নীরবতা, এবার জবাব চাই।