close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ই রা ক যু দ্ধ উসকে দেওয়া প শ্চিমা সুর ই রা ন সংঘাতেও শোনা যাচ্ছে কি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরাক যুদ্ধের উসকানি ও হুমকির সুর এখনো ইরান সংকটে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। পারমাণবিক হুমকি আর সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত বিশ্বরাজনীতিকে নতুন করে ঝুকিতে ফেলেছে।..

ইরাক যুদ্ধের সেই পুরনো উসকানিমূলক সুর এখন ইরান সংকটে যেন আবারও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিমা নেতাদের বক্তৃতা ও নীতিতে অনেকটা মিল দেখা যাচ্ছে, যা ইরাক আক্রমণের আগে তাদের দেয়া বক্তব্যের সাথেও বেশ মিল রয়েছে। ২০০৩ সালের ১ মে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ USS আব্রাহাম লিংকনে দাঁড়িয়ে ইরাকে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, “এক বিপজ্জনক ও আগ্রাসী শাসনব্যবস্থা ভেঙে একটি জাতিকে মুক্ত করার আরও বড় সক্ষমতা আমাদের আছে।” তিনি আরও বলেছিলেন, “বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়ে নয়, নির্ভুল অস্ত্র দিয়ে সামরিক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।”

আজকের পরিস্থিতিতে যখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তখন একই ধরনের বক্তব্য নতুন করে শোনা যাচ্ছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা নেতারা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যা ইরাক যুদ্ধের পূর্বাভাসের মতো মনে হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার স্পষ্ট বলেছেন, “ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।” এরকম দাবি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখেও বহু বছর শোনা গেছে। ২০০২ সালে নেতানিয়াহু মার্কিন কংগ্রেসে দাবি করেছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। সেই দাবিই ইরাক যুদ্ধের মতো পশ্চিমাদের হুমকির ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

তবে ইতিহাসের দৃষ্টিতে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগজনক সত্য হলো, যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করেছিল গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অজুহাতে, কিন্তু সেই অস্ত্র পাওয়া যায়নি। আর ইরাক যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে দেশটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, লাখ লাখ মানুষ নিহত হন, এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত অব্যাহত থাকে।

এখন ইরানের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “ইরানে চলমান পরিস্থিতি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির দিকে যাচ্ছে।” পশ্চিমা বিশ্ব আবারও আগের মতো একই রকম অজুহাত ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল শুধু ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, তারা সরকারের পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “বর্তমান ইরান সরকার যদি ইরানকে মহান করতে না পারে, তবে সরকার পরিবর্তন হবে।”

২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধ শুরুর আগে, নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “সাদ্দাম শাসনব্যবস্থার পতনের মাধ্যমে আরব বিশ্বে গণতন্ত্রায়ণ শুরু হবে।” আজ একই সুরে ইরানেও সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তনের কথা বলছে পশ্চিমারা।

নাটোর মহাসচিব মার্ক রুটো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইরানে সামরিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে হয়েছে এবং ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।

ইরাক যুদ্ধের ঐতিহাসিক ভুল আর নষ্ট হওয়া একটি জাতির কষ্ট ভুলে না গিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন ইরান সংকট নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করছে। প্রশ্ন থেকে যায়—ইতিহাস কি আবার নিজেকে পুনরাবৃত্তি করবে?

ইরাক যুদ্ধের আগ্রাসনের প্রেক্ষাপট এবং বিশ্ব নেতাদের উসকানিমূলক ভাষ্য এখন ইরান সংকটে পুনরায় উদয় হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি আর সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিতের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া না হলে বিশ্ব একবার আবার ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে পারে।

Nenhum comentário encontrado