close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

হঠাৎ রক্তস্রোত ও লাশের স্তূপ, সিরিয়ায় নতুন করে কী ঘটছে?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ! সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ সংঘাতে নিহত এক হাজারেরও বেশি মানুষ। হিংসা-সংঘাতে বিধ্বস্ত দেশটি নতুন করে আরও অনি..

সিরিয়ায় রক্তস্নাত সংঘর্ষ, নিহত ১৩০০-এর বেশি!

সিরিয়ায় আবারও রক্তের বন্যা! সম্প্রতি দেশটির ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সমর্থক সেনাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত কয়েকদিনের এই সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকসহ নিহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ হতাহতের ঘটনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সংঘর্ষের সূচনা

গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, যখন সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলের লাটাকিয়া ও জাবলেহ শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ঘাঁটিতে বাশারপন্থী সেনারা আকস্মিক হামলা চালায়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্য নিহত হন।

এর পাল্টা জবাবে শুক্রবার ও শনিবার সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী আসাদ সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালায়। এতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যরাও অংশ নেয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিনের ‘গণহত্যায়’ অন্তত ৮৩০ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর নিহত সদস্যের সংখ্যা ২৩১ জন এবং আসাদ সমর্থকদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫০ জন। সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩১১ জন।

পটভূমি: কেন ঘটছে এই সংঘাত?

গত ডিসেম্বরে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) প্রধান আহমেদ আল-শারা। তবে, আসাদ সমর্থকদের একটি অংশ নতুন নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেনি। বিদ্রোহী বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, এসব আসাদপন্থী সেনারা নতুন করে ষড়যন্ত্রের ছক কষছিল। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘাইয়াথ দাল্লাহ নামে এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের নেতৃত্বে তারা লাটাকিয়া ও জাবলেহ শহরের নিরাপত্তা বাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। এর জবাবে সরকারপন্থী বাহিনী শক্ত হাতে পাল্টা আঘাত হানে।

আলাওয়াইত সম্প্রদায় আক্রান্ত কেন?

এই সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সংখ্যালঘু আলাওয়াইত সম্প্রদায়, যারা সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদও এই সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। গত ১৪ বছর ধরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের শীর্ষ সেনারা সুন্নিদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে আসাদের পতনের পর থেকে সুন্নি মতাদর্শীদের মধ্যে আলাওয়াইতদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল।

সংঘর্ষের মধ্যে কিছু বিদেশি বিদ্রোহী যোদ্ধা আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের বসতিগুলোতে হামলা চালায়। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাট চালিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বানিয়াস শহরের বাসিন্দা মোহামেদ ফারেস বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি, কিছু পরিবারকে তাদের ঘরেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’

আরেক বাসিন্দা আলী জানান, ‘তারা আমাদের বাড়িতে ঢুকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। তাদের উচ্চারণ শুনে মনে হয়েছে, তারা উজবেক বা চেচেন।’

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কী?

সিরিয়া এখন চরম অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা প্রশাসন সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী ভেঙে দেওয়ায় এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার সেনা এবং সরকারি কর্মকর্তা চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন।

সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ এখন দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। চাকরি নেই, নিরাপত্তা নেই, ফলে অসন্তোষ বাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে হলে বিদেশি বিদ্রোহী যোদ্ধাদের বিতাড়িত করে এমন একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে ধর্ম বা সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। তবে এই সংঘাত থামবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

 

Tidak ada komentar yang ditemukan