close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

হঠাৎ কেন ‘ডিগবাজি’ দিলেন ট্রাম্প?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানকে ঘিরে উত্তেজনার আবহে হঠাৎ করেই যুদ্ধপন্থায় ঝুঁকলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধান বলছে, এই মনোভাব বদলের পেছনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কৌশলগত চাপ..

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে আবারও।
আর এই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কয়েক সপ্তাহ আগেও যিনি ইরান ইস্যুতে সামরিক অভিযানকে সর্বশেষ উপায় হিসেবে দেখছিলেন, তিনি হঠাৎ করেই কড়া যুদ্ধমুখী অবস্থানে চলে গেলেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্পের এই মনোভাব বদলের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহু কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপই এখন সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।

বিশেষ করে, ইসরায়েলের প্রথম রাতের বিমান হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার নিহত হওয়ার পর ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়।
এই হামলাকে ট্রাম্প ‘অত্যন্ত সফল’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং এটি তাঁর মধ্যে যুদ্ধের কার্যকারিতা সম্পর্কে নতুন করে আত্মবিশ্বাস জন্ম দেয়।

ট্রাম্পের নিজের ভাষায়, “প্রথম দিনের হামলায় তারা (ইরানি পক্ষ) কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে… সংঘাতের একপক্ষ এখন ধসে পড়েছে।”
এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়, তিনি যুদ্ধকে এখন আর কেবল ‘চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার’ নয়, বরং একটি সরাসরি ‘সম্ভাব্য সমাধান’ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন।

নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিশ্লেষক বাহমান কালবাসি বিবিসি পার্সিয়ানকে বলেন, “ট্রাম্প হচ্ছেন এমন এক নেতা, যিনি নিজের অবস্থান দ্রুত পাল্টাতে পারেন, বিশেষ করে যখন আশেপাশে দৃঢ় পরামর্শদাতা থাকেন। নেতানিয়াহু এই ভূমিকাটিই পালন করছেন।

ট্রাম্প যদিও প্রকাশ্যে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেননি, তবে তাঁর বক্তব্যে এক ধরনের ‘বিকল্প না থাকা’র সুর লক্ষ্য করা গেছে।
তিনি বলেন, “এখন আলোচনার সময় নয়। ইরান আমাদের শর্ত মেনে নিলে ভালো হতো। এখন হয়তো আমরা এগোবো, হয়তো কিছুই করব না। সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেই নেওয়া হবে।”

এই বক্তব্যে যেমন রয়েছে যুদ্ধের সম্ভাবনার ইঙ্গিত, তেমনি রয়েছে দরজা খোলা রাখার কূটনৈতিক কৌশল।
তবে ইসরায়েলি নেতানিয়াহুর দিকে তাকালে বোঝা যায়, তিনি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নিজের কৌশল বাস্তবায়ন করে নিচ্ছেন।

বিশ্ব গণমাধ্যমের মতে, ইসরায়েল এখনো বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং নেতানিয়াহু সরাসরি বলেছেন, “এখন থামার সময় নয়, বরং এগিয়ে যাওয়ার সময়।”
এই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্প একটি বন্ধ ঘরোয়া বৈঠকে বলেন, “আমি যদি সুযোগ পাই, আমি নিজেও সরাসরি নেতৃত্বে যেতে রাজি আছি।”

এই কথার মাধ্যমে তিনি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনি হয়তো আরও সক্রিয়ভাবে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সামরিকভাবে যুক্ত হতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক লরেন্স ফ্রিডম্যান বলেন, “ট্রাম্পের মধ্যে একধরনের 'শো-ম্যানশিপ' রয়েছে। তিনি সবসময় এমন কিছু করতে চান, যা জনগণের চোখে সাহসী পদক্ষেপ মনে হবে। নেতানিয়াহুর দিক থেকে চাপ এবং একটি সফল সামরিক অভিযানের পর তিনি যে অবস্থান বদলাবেন, তা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধপন্থী অবস্থানে ফেরার এই নাটকীয় পরিবর্তন কেবল ব্যক্তিগত কৌশল নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
তবে এটি কতটা স্থায়ী হবে, এবং ট্রাম্প সত্যিই সামরিক পদক্ষেপে কতটা অগ্রসর হবেন— তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিশ্ববাসী কেবল অপেক্ষা করছে ‘শেষ মুহূর্তের’ সেই সিদ্ধান্তের।

No comments found