close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

হোয়াইট হাউসে পাকিস্তান সেনাপ্রধানের গোপন বৈঠক, ট্রাম্পের সঙ্গে দুই ঘণ্টা, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দুঃসহ টানাপোড়েন!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের চমকপ্রদ সফরে ঘটে গেল ইতিহাসে নজিরবিহীন কূটনৈতিক ঘটনা! ট্রাম্পের সঙ্গে গোপন বৈঠক, আলোচনায় ইরান, চীন, যুদ্ধ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—সবই! কিন্তু এর পরিণতি..

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে সম্প্রতি ঘটে গেল এক রহস্যে ঘেরা, কিন্তু অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠক। পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে একান্ত বৈঠক করেছেন। যা পূর্বে নির্ধারিত ছিল মাত্র এক ঘণ্টার জন্য, তা গড়ায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময়জুড়ে। এতটাই স্পর্শকাতর ছিল এই বৈঠক যে, হোয়াইট হাউস কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, এবং গণমাধ্যমের প্রবেশও ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এই বৈঠকটি নিছক সৌজন্যমূলক নয়, বরং এর গভীরে লুকিয়ে আছে ভূরাজনৈতিক সমীকরণ, যুদ্ধ ও শান্তির বার্তা এবং অর্থনৈতিক আগ্রহের জটিল হিসাব-নিকাশ। ট্রাম্প ও মুনিরের আলোচনায় উঠে এসেছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, খনিজসম্পদ, জ্বালানি ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ইত্যাদি।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক পাকিস্তানের জন্য যেমন এক বড় কূটনৈতিক সুযোগ, তেমনি সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জের পাহাড়।

আইএসপিআর সূত্র জানায়, আসিম মুনির ও ট্রাম্পের আলোচনা জুড়ে ছিল অর্থনীতি, নতুন প্রযুক্তি ও ভূরাজনীতি। মুনির বিশেষভাবে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে মে মাসে সংঘর্ষ থামাতে মার্কিন সহযোগিতার জন্য।

অন্যদিকে, ট্রাম্প সরাসরি বলেন, -পাকিস্তানিরা ইরানকে অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো জানে।” এ বক্তব্যে পরিষ্কার, ট্রাম্প চান পাকিস্তান যেন ইরান ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। তবে এই প্রসঙ্গে ট্রাম্পের কথায় উদ্বেগও ছিল—তারা খুশি নয়"—যা বর্তমান ইরান পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের অসন্তোষের ইঙ্গিত বহন করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রূপরেখা যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের গতিপথ নতুন মোড় নিতে চলেছে।

এই বৈঠকের মূল বৈশিষ্ট্যই ছিল তার অপ্রচলিত রূপ। সাংবাদিকদের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি, হোয়াইট হাউসের নীরবতা এবং সেনাপ্রধানের ‘চুপচাপ কূটনীতি’—সব মিলিয়ে বৈঠকটি হয়েছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্রেক্ষাপটে। ওয়াশিংটনের এক নৈশভোজে মুনির স্বীকার করেন, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে।

কিন্তু ট্রাম্পের আমলে দৃশ্যপট বদলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিজাবেথ থ্রেলকেল্ড একে বলছেন, -যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতির স্পষ্ট সংকেত।

সবচেয়ে জটিল সমীকরণ চীনকে নিয়ে। পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন, যার সঙ্গে সিপিইসি প্রকল্পে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ চলছে। দেশের সামরিক অস্ত্রের ৮০ শতাংশই আসে চীন থেকে।

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির বিশ্লেষক ড. মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, “একদিকে চীন, আরেকদিকে যুক্তরাষ্ট্র—এই দুই প্রতিপক্ষের মাঝে কৌশলগত ভারসাম্য রাখা ইসলামাবাদের জন্য রীতিমতো রশির টানাটানি।”

এই দ্বিধাজনক অবস্থানে ট্রাম্পের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠতা চীনের চোখে পড়লেই বাড়তে পারে দূরত্ব। এবং এর ফলে সিপিইসি প্রকল্প ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় প্রভাব পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। আসিম মুনির ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সম্প্রতি ইরান সফরে গিয়ে ইরানকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, ইরানের সার্বভৌমত্বে আঘাত মেনে নেওয়া যায় না।

তবে একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়তে গিয়ে ইসলামাবাদ সরাসরি কোনো পক্ষ না নিলে উত্তেজনা কম থাকবে। ফয়সালের মতে, “ইরানের সঙ্গে শত্রুতা পাকিস্তানের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এতে শুধু পশ্চিম সীমান্তে হুমকি তৈরি হবে না, বরং অভ্যন্তরীণ শিয়া সম্প্রদায়ের মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা ছড়াতে পারে।

বিশ্লেষক সাহার খান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি পাকিস্তানকে আবার কৌশলগত মোড়কে ফেলে দেখতে চায়, তবে সেটা হবে আত্মঘাতী।” কারণ, পাকিস্তান এখন চায় স্বাধীন ও বহুমুখী কূটনীতি। ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে এককভাবে পাকিস্তানকে ব্যবহার করার দিন শেষ।

এই মুহূর্তে ইসলামাবাদ চায়—চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান—তিন পক্ষের সঙ্গেই ভারসাম্য রেখে চলতে। কিন্তু সেই ভারসাম্য বজায় রাখা সত্যিই কি সম্ভব?

ট্রাম্প ও আসিম মুনিরের বৈঠক নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন পথ খুলে দিয়েছে। তবে সেই পথ কেবল রৌদ্রোজ্জ্বল নয়, বরং ঢেকে আছে কূটনৈতিক কাঁটায়।

চীনের সঙ্গে শতভাগ নির্ভরশীলতা, ইরানের প্রতি ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের চাপ—এই তিনের সমন্বয় ঘটিয়ে ইসলামাবাদকে চালাতে হবে এখন দারুণ সূক্ষ্ম এক রাজনৈতিক খেলা।

আর এই খেলায় একটুও ভুল হলে, যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে পাকিস্তানের কৌশলগত ভারসাম্য।

Keine Kommentare gefunden