বাংলাদেশের ফুটবলে এখন নতুন উন্মাদনা। দীর্ঘ সময় পর এদেশের ফুটবলপ্রেমীরা আবারও গ্যালারিতে ঢল নামাচ্ছেন, ম্যাচের টিকিটের জন্য দেখা যাচ্ছে তীব্র চাহিদা। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বৃহস্পতিবার হংকং চায়নার বিপক্ষে মাঠে নামে জামাল ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। উত্তেজনাপূর্ণ এই ম্যাচে প্রাণপণ লড়েও শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা মেলেনি। তবে মাঠের লড়াইয়ের আগের রাতেই ঘটে এক বিশেষ ঘটনা—যেখানে একসঙ্গে বসেছিলেন বাংলাদেশের দুই জনপ্রিয় মুখ, সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার হামজা চৌধুরী।
তামিম নিজেই জানিয়েছেন সেই রাতের গল্প। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে খেলার আগের দিন রাতে হামজার কথা হয়েছে। আমরা এক জায়গায় বসে কিছুক্ষণ গল্প করছিলাম। ফুটবল বা ক্রিকেট নয়, একেবারে অন্য বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছিল। আমি নিশ্চিত, ওরা যখনই সুযোগ পাবে, আরও ভালো কিছু করবে।”
এই একান্ত আলাপের মধ্যেই যেন ফুটবলের প্রতি তামিমের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গর্বিত, তেমনি ফুটবলারদের সাফল্যেও খুঁজে পান আনন্দ। তামিমের চোখে বাংলাদেশের ফুটবলাররা এখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, আর এই বিশ্বাসই তাদের এগিয়ে নিচ্ছে সামনে।
হংকং চায়নার বিপক্ষে ম্যাচে যদিও জামাল ভূঁইয়ারা জয় পায়নি, তবে তাদের লড়াই মন জয় করেছে সমর্থকদের। ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে পড়েও বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩-৩ সমতায় আসে। শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হারলেও সেই প্রতিরোধই তামিমের কাছে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। তার ভাষায়, “একটা সময় মনে হচ্ছিল ম্যাচটা একপেশে হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটাই প্রমাণ করে দলটার ভেতরে এখন লড়াইয়ের মানসিকতা তৈরি হয়েছে।”
ফুটবলে এই পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন সাবেক সাফজয়ী গোলকিপার আমিনুল হকও। তিনি মনে করেন, হামজা চৌধুরী, শমিত সোমদের মতো নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা বাংলাদেশ দলের প্রাণ ফিরিয়ে এনেছেন। তাদের খেলার মান, শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
তবে আমিনুল কিছু ঘাটতির কথাও বলেন, বিশেষ করে গোলকিপিং নিয়ে। তার মতে, হংকং ম্যাচে গোলকিপার মিতুল মারমা কিছুটা নার্ভাস ছিলেন। তিনি বলেন, “গোলকিপার যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারত, তাহলে হয়তো ফলটা ভিন্ন হতে পারত। আমার মনে হয়েছে, আমাদের গোলকিপার কিছুটা হলেও নার্ভাস ফিল করেছে।”
এই মন্তব্যের মধ্যেই ফুটবলের উন্নতির জায়গাগুলো উঠে আসে স্পষ্টভাবে। তবু আশার কথা, বাংলাদেশ দল এখন হারতে জানলেও হাল ছাড়ে না। এই মানসিকতা, আত্মবিশ্বাস এবং দর্শকদের উন্মাদনাই নতুন করে ফুটবলকে ফিরিয়ে আনছে পুরনো গৌরবে।
তামিম-হামজার সেই বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপ যেন হয়ে উঠেছে প্রতীক—একই স্বপ্ন, ভিন্ন খেলা; কিন্তু লক্ষ্য একটাই—বাংলাদেশের পতাকা যেন বারবার উড়ে যায় গৌরবে, বিশ্বমঞ্চে।