হ্যালো আমেরিকা, তোমার দিকে প্রেতাত্মা ছুটে আসছে : যুক্তরাষ্ট্রকে শি জিনপিং..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার সাম্প্রতিক পোস্টে আমেরিকাকে ইতিহাসের ভয়ঙ্কর পরিণতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। অতীতের মহাসম্রাটদের পতনের উদাহরণ টেনে তিনি সতর্ক করেন— যুদ্ধনেশা ও সাম্রাজ্যবাদ আমেরিকাকেও একই পরিণত..

ওয়াশিংটনের হৃদয়ে হঠাৎ যেন ঠাণ্ডা স্রোত বইছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে এমন এক বার্তা দিয়েছেন, যা কূটনৈতিক মহলে ঝড় তুলে দিয়েছে।

শি’র বার্তায় সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সতর্কবার্তা ছিল। তিনি বলেন, “চীন জানে মহাশক্তিগুলো কীভাবে তাদের যুদ্ধযন্ত্রের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।” ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার বার্তা দিয়ে তিনি আমেরিকাকে ইঙ্গিত দেন যে, তারাও এই অমোঘ নিয়তির হাত থেকে রেহাই পাবে না।

শি জিনপিং তার পোস্টে চীনের তিনটি বিখ্যাত রাজবংশের পতনের বর্ণনা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সামরিক আগ্রাসন ও বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গে তাদের তুলনা করেন।

প্রথমে তিনি উল্লেখ করেন খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের কিন রাজবংশের কথা। এ রাজবংশ যুদ্ধরত রাজ্যগুলোকে একত্র করেছিল, তৈরি করেছিল মহাপ্রাচীর, এবং একটি ঐতিহাসিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু এই সাম্রাজ্য নিজেদের সামরিক জয়ের জন্য সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে নিয়েছিল। একের পর এক যুদ্ধ, অবিরাম সামরিক অভিযান এবং মানুষের উপর নিপীড়ন এই রাজবংশকে মাত্র ১৫ বছরের মাথায় ধ্বংস করে দেয়।

শি পরে তুলে ধরেন অষ্টম শতাব্দীর তাং সাম্রাজ্যের গল্প। চীন তখন বিশ্বের প্রান্ত থেকেও কর আদায় করত। কিন্তু বিজয়ের নেশায় মত্ত হয়ে তাদের সেনাবাহিনী মধ্য এশিয়ার গভীরে অভিযান চালায়। সামরিক খরচ এবং আভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার ফলে আন লুশানের বিদ্রোহ ঘটে, যা রাজধানী চাংআনকে পুড়িয়ে দেয় এবং সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়।

সবশেষে তিনি কথা বলেন মোঙ্গল সাম্রাজ্য নিয়ে— চেঙ্গিস খানের অজেয় অশ্বারোহী বাহিনী অর্ধেক পৃথিবী দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত সম্প্রসারণ এবং এককেন্দ্রিক শক্তির কারণে তাদের পতনও দ্রুত ঘটে। এটি হয়ে পড়ে ইতিহাসের সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী রাজবংশগুলোর একটি।

এই তিনটি উদাহরণ তুলে ধরার পর শি বলেন, “সাম্রাজ্য কখনো বাইরের শত্রুর হাতে ধ্বংস হয় না, তারা নিজেদের যুদ্ধযন্ত্র ও সামরিক লোভের নিচে চূর্ণ হয়ে পড়ে।” তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রও এখন সেই একই পথে হাঁটছে।

বিশ্বজুড়ে ৭৫০টিরও বেশি সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলা এবং বছরে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার সামরিক খাতে খরচ করাকে তিনি এই পতনের আলামত হিসেবে বর্ণনা করেন। শি রূপকভাবে বলেন, “তোমরা কি শুনতে পাচ্ছো না? তোমাদের সাম্রাজ্যের কুচকাওয়াজের মধ্যেই হয়তো ইতিমধ্যে সেই প্রেতাত্মার পায়ের শব্দ বাজতে শুরু করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শি জিনপিংয়ের এই বক্তব্য কেবল ইতিহাসচর্চা নয়— এটি এক ধরনের জিওপলিটিক্যাল বার্তা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনার পটভূমিতে এই বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

বিশেষ করে, যখন দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান ইস্যু এবং ট্রেড ও প্রযুক্তি যুদ্ধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উত্তপ্ত — তখন চীনের প্রেসিডেন্টের এমন প্রকাশ্য হুঁশিয়ারি বিশ্ব কূটনীতির মঞ্চে বড় আলোড়ন তুলেছে।

শি জিনপিংয়ের এই পোস্ট অনেকটা অলঙ্কারিক ও বুদ্ধিদীপ্ত হলেও, এর ভেতর রয়েছে গভীর বার্তা। প্রশ্ন এখন শুধু একটাই— যুক্তরাষ্ট্র কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে, নাকি আরও এক সাম্রাজ্যের ধ্বংসযাত্রা শুরু হলো?

कोई टिप्पणी नहीं मिली