close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান! হাজার বছরের ঐতিহাসিক বেলে পাথরের অলৌকিক কূপ..

আব্দুল্লাহ আল নোমান avatar   
আব্দুল্লাহ আল নোমান
****

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঠাকুরগাঁও।। 

 রাণীশংকৈলে অবস্থিত দেশের অন্যতম পুরাকীর্তি গোরক্ষনাথ মন্দির। উপজেলার নেকমরদ শহর থেকে ৭ কি.মি। সেখান থেকে ৫ কি.মি পশ্চিমে ‘গোরকই’ নামক গ্রামে এর অবস্থান। উপজেলা শহর থেকে প্রথমে ভ্যান বা চার্জার অটো যোগে নেকমরদ চৌরাস্তায় আসতে হয়, সেখান থেকে ভ্যান বা চার্জার অটো রিজার্ভ করে গোরকই মন্দিরে যেতে হয়। এ মন্দির ও মন্দিরের কূপটি অলৌকিকভাবে বেলে পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এখানে গোরক্ষনাথ মন্দির ছাড়াও আছে নাথ আশ্রম। গোরক্ষনাথ মন্দির স্থানীয়ভাবে গোরকই মন্দির নামেই পরিচিত। মন্দির চত্বরে আছে মোট ৫টি মন্দির। এছাড়াও আছে ৩টি শিবমন্দির ও ১টি কালি মন্দির। নাথ মন্দিরটি চত্বরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। নাথ মন্দিরের সাথেই উত্তরপাশে গোরকই কূপ। কূপটি সম্পূর্ণ বেলে পাথরে নির্মিত। বাংলাদেশের কোথাও পাথরের নির্মিত এধরনের কূপের সন্ধান পাওয়া যায় না। কূপটির চারদিকে ইটের প্রাচীর। তবে পূর্ব ও পশ্চিমদিকে একটি করে দরজা আছে। মূল ভূমি থেকে প্রায় তিন ফুট নিচুতে কূপের মেঝে। মেঝেটি বেলে পাথরে নির্মিত। মূল ভূমি থেকে মেঝেতে নামার জন্য সিঁড়িগুলোও বেলে পাথরের। কূপটির গভীরতা সাড়ে সাত ফুট এবং এর ব্যাস আড়াই ফুট। বেলে পাথর সামান্য বাঁকানোভাবে কেটে কূপের মুখ থেকে তলদেশ পর্যন্ত অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বসানো হয়েছে। কূপের তলটুকুতেও মাটি নেই। একটি পাথরের সাথে আরেকটি পাথরের জোড়া লাগাতে কোনো মসলা ব্যবহার করা হয়নি। মনে করা হয় পাথরের জোড়াগুলো দিয়ে কূপটি পানিতে ভর্তি হতো। আবার এরূপ কথাও প্রচলিত রয়েছে যে কূপের তলদেশে পাথরের মাঝখানে দুটি ছিদ্র ছিল। সেই ছিদ্র দুটি বন্ধ করে দিলে কূপের ভিতরে পানি আসত না এবং খুলে দিলে পানিতে পূর্ণ হতো। পাপ—মোচন, সন্তান লাভসহ নানা মনবাসনা নিয়ে উত্তারাঞ্চলের লাখ লাখ হিন্দু নারী—পুরুষ এই কূপের পানিতে স্নান করার উদ্দেশে আসেন। এই কূপের পানিকে গঙ্গার মতোই পবিত্র মনে করেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। এছাড়া শুদ্ধিকরণের জন্য শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হয় এই কূপের পানি। কূপটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর পানি দিয়ে লাখ লাখ মানুষ স্নান করার পরেও কূপের পানি একটুও কমে না। পুরোনো এই মন্দির ও বৈচিত্রময় আশ্চর্যকূপ ও এর পানি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে মহাপবিত্র এবং এটি তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রতিবছর ফালগুনের শিব চতুর্দশীতিথীতে পাঁচ দিনব্যাপী ‘গোরক্ষনাথ বারণী’ নামে মেলার আয়োজন করা হয়। আর এই কূপে স্নান করতে ও শিব চতুর্দশীতিথীতে পূঁজা উপলক্ষে মেলায় বিভিন্ন জেলার নানা বয়সী লাখ লাখ নারী—পুরুষের সমাগম হয়। কূপের পূর্ব দিকে একটি দরজা এবং পশ্চিম দিকে একটি দরজা রয়েছে। এ দুটো দরজা দিয়ে স্নানের জন্য প্রবেশ করে পূর্ণার্থীরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সনাতন ধর্মের শত শত নারী পুরুষ মেলায় এসে মন্দিরে অবস্থিত (কথিত) অলৌকিক কূপে মানত করে পুণ্যস্নান করেন। মেলার সময় এ কূপের পানিতে স্নান করতে আসে দেশের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার ভক্ত। বিভিন্ন মানত করে পরিবার—পরিজনসহ তারা আসেন এই মন্দিরে। তবে অনেকের আশা পূরণ হলে মন্দিরে এসে পুনরায় পূজা এবং মানত করা, পাঠা ছাগল, হাস, মুরগিসহ নানা জিনিসপত্র দিয়ে যান। অতীতে মন্দিরটি প্রায় ২৭ একর জমি উপর অবস্থিত ছিলো। বর্তমানে ৮—৯ একর জমি মন্দিরের দখলে আছে। বাকী জমিগুলো বেদখল হয়ে গেছে। এ ছাড়াও মন্দিরের দক্ষিণ পার্শ্বে দুজন পূঁজারীর সমাধি রয়েছে। গৌরক্ষনাথের মৃত্যুর পর ওই দুজন পূজারী মন্দিরের দেখাশুনা করাকালীন তাদের মৃত্যুর পর মন্দিরের পার্শ্বেই তাদের সমাধিস্থ করা হয়। এ দুজন পূজারীর নামও সঠিক জানা নেই কারও। মন্দিরের উত্তরে আছে একটি পান্থশালা। পান্থশালার দরজায় একটি ফলক বা গ্রানাইট শিলালিপি ছিল যা বর্তমানে দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এই শিলালিপিটি বাংলা অক্ষরে উৎকীর্ণ এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত শিলালিপি গুলোর মধ্যে প্রাচীনতম। এ ছাড়াও এ মন্দিরে গ্রানাইট পাথরের বহুল ব্যবহার দেখা গেছে। এছাড়া মন্দিরের পাশেই অবস্থিত একটি বড় পুকুর রয়েছে, সেই পুকুরের চার পাশে পানিতে অনেক কালো রঙের পাথর ছিল। যার মধ্যে অনেক গুলোই হারিয়ে গেছে। মন্দিরটির সম্পর্কে আরও কথিত আছে, গোরক্ষনাথ ছিলেন নাথ পন্থীদের ধর্মীয় নেতা খীননাথের শিষ্য। নবম—দশম শতাব্দির মধ্যভাগে গোরক্ষনাথের আবির্ভাব ঘটে। তিনি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে এখানে মন্দির স্থাপন করেন। অলৌকিক ওই কূপটি সেই সময়ে নির্মিত বলে প্রবীণদের ধারণা। আবার অনেকের মতে, গোরক্ষনাথ কোনো ব্যক্তির নাম নয়, এটি একটি উপাধি মাত্র। গোরক্ষনাথ উপাধি চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এই মন্দির ও আশ্রম নির্মাণ করা হয়। মন্দিরটি সরকারি ভাবে রক্ষনাবেক্ষনের দাবী স্থানীয়দের।

Hiçbir yorum bulunamadı


News Card Generator