লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় সাপের কামড়ে বিষ্ণু চন্দ্র শীল (১৭) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম না থাকায় সে সময়মতো চিকিৎসা পায়নি বলে অভিযোগ করেছে মৃত শিক্ষার্থীর পরিবার। আজ রোববার দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে বিষ্ণু শীলের সহপাঠীরাসহ এলাকাবাসী।
কালীগঞ্জ উপজেলায় এন্টিভেনম পর্যাপ্ত রাখার ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
বিষ্ণু চন্দ্র শীল উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের সুনীল চন্দ্র শীলের ছেলে এবং সদ্য সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৩ জুন) রাত ১০টার দিকে নিজ বাড়ির উঠানে হাঁটার সময় বিষ্ণুকে একটি বিষধর সাপ ছোবল দেয়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।
বিষ্ণুর মামা সুকুমার চন্দ্র শীল বলেন, হাসপাতালে আনার পর তারা অ্যান্টিভেনম দিতে পারেনি। যদি সময়মতো অ্যান্টিভেনম দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো ওকে বাঁচানো যেত। তাদের অবহেলার কারণেই বিষ্ণু মারা গেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। তারা দাবি করেছে, রোগীকে যখন আনা হয়, তার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। দ্রুত বেসরকারিভাবে অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে প্রয়োগ করা হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী রাজিব মো. নাসের বলেন, রোগীকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল ।
আমাদের সরকারি অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ সাময়িকভাবে শেষ হওয়ায় আমরা দ্রুত বাইরে থেকে সংগ্রহ করে রোগীকে ডোজ প্রয়োগ করি। কিন্তু ততক্ষণে বিষক্রিয়া সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে অ্যান্টিভেনমের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
বিষ্ণুর মৃত্যুর খবরে তার সহপাঠী ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আজ দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে তারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে। বিক্ষোভকারীরা এ মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার দাবি করে। একই সঙ্গে তারা জেলার সব সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মা-বাবার বিচ্ছেদ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই মামার বাড়ি উত্তর বালাপাড়া গ্রামে থেকে পড়ালেখা করত বিষ্ণু। তার মা দিনা রানী শীল ওমানপ্রবাসী। গতকাল শনিবার দুপুরে বিষ্ণুর লাশের সৎকার হয়েছে।