উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে ২৫ শিশুসহ ২৭ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোমবারের (২১ জুলাই) ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৫ জনই শিশু। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরিস্থিতি আরও শোচনীয় রূপ নিচ্ছে।
এই দুর্ঘটনায় আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাপ বেড়েছে অনেকগুণ। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা কার্যক্রমে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্যই হাসপাতাল চত্বরে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান জানান, এই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২৭। এর মধ্যে ২৫ জনই শিশু, যারা স্কুলের ছাত্র। আহত অবস্থায় ৭৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসকদের নিরবচ্ছিন্ন কাজ নিশ্চিত করতে হাসপাতালে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা জানি, সবাই উদ্বিগ্ন এবং আপনজনদের অবস্থা জানতে চান। কিন্তু হাসপাতালের বাইরে অতিরিক্ত ভিড় হলে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এটি বিপজ্জনক হতে পারে।”
এ সময় তিনি রক্তদানের প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন। “আমাদের রক্তের প্রয়োজন সীমিত। বিশেষ করে যাদের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ, তারা যোগাযোগ করুন। রক্ত দিতে হবে সংগঠিতভাবে, বিশৃঙ্খলভাবে নয়,বলেন তিনি।
স্বজনদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, কারা কোন হাসপাতালে আছেন, তার একটি তালিকা আমরা ইতোমধ্যে পাবলিক ডোমেইনে দিয়েছি। আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে—অনুগ্রহ করে তালিকা দেখে জেনে নিন, অযথা হাসপাতালে ভিড় করবেন না।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকাজ শেষে বিমান বাহিনীর একটি দল তদন্ত শুরু করেছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ চলাকালীন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং স্কুল চত্বরে বিধ্বস্ত হয়।
এ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশজুড়ে শোকপ্রকাশ করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। শিশুদের প্রাণহানি ও অসহায় আহতদের চিত্রে মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন এবং আহতদের জন্য রক্তদান ও অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশিক্ষণ বিমান চলাচলের নিয়মনীতি আরও কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত। জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানো কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এখন প্রয়োজন শান্ত থাকা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো—এই আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, “আমরা খুবই খারাপ সময় পার করছি। সবাই শিশুদের জন্য দোয়া করুন।”