close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

হাসপাতালে বসেই এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন ইশা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সন্তান জন্মের মাত্র দুই দিন পর হাসপাতালের বিছানায় বসেই এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন ইশা। তাঁর অদম্য সাহস ও পড়াশোনার প্রতি প্রতিশ্রুতিই গোটা দেশের গর্ব হয়ে উঠেছে।..

যখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষার চাপেই দিশেহারা হয়ে পড়ে, তখন শরীয়তপুরের তরুণী ইশা আলম দেশের সামনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত — সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মাথায়, হাসপাতালের বিছানায় বসেই এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন এই সাহসিনী। তাঁর এই অধ্যবসায় এবং ইচ্ছাশক্তির গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে।

শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ইশা আলমের বয়স মাত্র ১৮। গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা তাঁকে দমাতে পারেনি। দুই দিন পর, ২৯ জুন রবিবার সকাল ১০টায় হাসপাতালের বিছানাতেই অংশ নিয়েছেন বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায়।

ইশার বাসা শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামে। বাবা মো. শাহ আলম সিকদারের কন্যা ইশার বিয়ে হয় গত বছর ২৮ জুন, একই জেলার কাশাভোগ গ্রামের মাহবুবুর রহমান তুষারের সঙ্গে। তুষার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গর্ভাবস্থার মাঝেই এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ইশা।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দেন তিনি। এরপর শুক্রবার প্রসববেদনা শুরু হলে তাঁকে শরীয়তপুরের নিপুণ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেদিন রাতেই জন্ম নেয় ইশার কন্যাসন্তান।

পরদিন সকালেই ছিল বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা। কিন্তু শারীরিক অবস্থা একেবারেই পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার উপযুক্ত ছিল না। তাই কলেজের একজন শিক্ষক মো. মাসুম মিয়ার পরামর্শে ক্লিনিকেই পরীক্ষা দেয়ার জন্য কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করা হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওয়াজেদ কামালের মানবিক সিদ্ধান্তে, একজন মহিলা শিক্ষক ও একজন মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে ক্লিনিকের বিছানাতেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

হাসপাতালের সেই মুহূর্তটি যেন কেবলমাত্র একটা পরীক্ষারই না, বরং ছিল একজন নারীর আত্মত্যাগ, অধ্যবসায় ও শক্তির প্রতীক।

ইশার মা সুহাদা বেগম বলেন, “মেয়ের এমন সাহস আর মনোবল দেখে আমি নিজেই অবাক। কখনও ভাবিনি এমন অবস্থায়ও সে পরীক্ষা দিতে পারবে। ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন।”

স্বামী মাহবুবুর রহমান তুষার বলেন, “ও সবসময় বলতো, আমি যেন ওর পাশে থাকি। কিন্তু সন্তান জন্মের মাত্র দুই দিন পর পরীক্ষা দেবে, এটা আমি কল্পনাও করিনি। কলেজের অধ্যক্ষ স্যারের কাছে লিখিতভাবে জানানো হলে, তিনি ও শিক্ষকরা মানবিকভাবে এগিয়ে আসেন।”

ইশা জানান, তাঁর স্বপ্ন আইন নিয়ে পড়া এবং একদিন বিচারক হয়ে নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানো। “সন্তান জন্মের পরও পরীক্ষা দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আল্লাহ, আমার পরিবার, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ,” বলেন এই সাহসী তরুণী।

ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. হোসনে আরা বেগম রোজী বলেন, “২৭ তারিখ রাতে যখন ইশা আমাদের কাছে আসে, ওর চোখে ছিল শুধুই পরীক্ষা দেয়ার তাড়না। আমরা সবরকমভাবে চেষ্টা করেছি ওর পাশে দাঁড়াতে। ওর মানসিক দৃঢ়তাই ওকে পরীক্ষার কক্ষে — হাসপাতালের বিছানায় — পৌঁছে দিয়েছে।

সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওয়াজেদ কামাল বলেন, “শিক্ষকরা সবসময় মানবিক। ইশার অনুরোধ ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা ক্লিনিকেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করি। মেয়েটির হাতের লেখা ছিল দারুণ, পরীক্ষাও খুব ভালো দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই মেয়েরা আমাদের আশার আলো। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া এ ধরনের শিক্ষার্থীদের কারণেই সমাজ বদলায়।”

ইশার গল্প কেবল একটি পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এক সংগ্রামী নারীর নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে সাহসিকতার এক অনন্য দলিল। নতুন সন্তানের জন্ম, অসুস্থতা, মানসিক চাপ — সবকিছুকে ছাপিয়ে যে মেয়ে বাংলা দ্বিতীয় পত্র লিখেছে, সে কেবল একজন শিক্ষার্থী নয় — সে এক ‘জীবন্ত অনুপ্রেরণা’

এই সাহসী কন্যার জন্য দেশের কোটি মানুষের পক্ষ থেকে রইল দোয়া ও শুভকামনা।

没有找到评论