দক্ষিণ গাজার তথাকথিত নিরাপদ অঞ্চল আল-মাওয়াসিরে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে আবারও মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার রাতভর এবং রোববার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই আক্রমণে অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধরাও রয়েছেন।
আল-মাওয়াসিরে আগুনে পুড়ল তাঁবু, নিহত ৭ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে আল-মাওয়াসির অঞ্চলের তাঁবুগুলোতে আগুন লেগে কমপক্ষে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এটি ছিল ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের (ইউএনআরডব্লিউএ) নির্ধারিত নিরাপদ অঞ্চল। তবে এই নিরাপদ জোনকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান। তিনি বলেছেন, “গাজায় স্কুল ও হাসপাতালে হামলা এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বিভিন্ন স্থানে একের পর এক আক্রমণ, হতাহতের মিছিলআল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইসরায়েলি বাহিনীর এই হামলার ভয়াবহ চিত্র।
স্কুলে হামলা: গাজার একটি স্কুলে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন আটজন।
জাবালিয়ার অভিযান: দুটি পৃথক অভিযানে প্রাণ হারান সাতজন।
গাড়িতে বোমা হামলা: গাজা শহরে একটি গাড়িতে বোমা ফেলে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালে আক্রমণ: অবরুদ্ধ উত্তর গাজার এই হাসপাতালের আশপাশে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন তিনজন। হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, ৪০০ জনের বেশি রোগী এবং বেসামরিক লোকজন সেখানে আটকা পড়ে আছেন। তাদের অনেকেই চিকিৎসা ও অক্সিজেনের জন্য নির্ভরশীল।
বাজারে ড্রোন হামলা: বুরেজ শরণার্থী শিবিরের একটি বাজারে ড্রোন হামলায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
তুফাহ ও শুজাইয়া: আরও সহিংসতাতুফাহ এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে বিমান হামলায় দুইজন গুরুতর আহত হন। শুজাইয়া পাড়ায় হামলায় প্রাণ হারান আরও দুইজন।
জাতিসংঘের তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগগাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর একের পর এক হামলায় ফিলিস্তিনি জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান। তার দাবি, “যুদ্ধকালীন নিয়ম ভেঙে হাসপাতাল, স্কুল ও বাজারের মতো স্থানে আক্রমণ করা হচ্ছে। এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”
গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতিগাজার প্রতিটি প্রান্তে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় সেখানকার জনগণ আর্তনাদ করছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নেই, আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্রুত এই সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এই ধরনের আচরণকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
গাজার ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারাচ্ছন্নএকটি নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায় দিন কাটানো ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত এখন মৃত্যু এবং ধ্বংসের বার্তা নিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মহলের এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Keine Kommentare gefunden