গাজীপুরে হামলার শিকার এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, শিবিরের কঠোর প্রতিক্রিয়া
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
রবিবার (৪ মে) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা আমাদের সহযাত্রী, তাদের ওপর হামলা মানে দেশের স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর আঘাত। এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি—ফ্যাসিবাদী শক্তি কোথাও রেহাই পাবে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “৩৬ জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে পুরাতন কিংবা নতুন কোনো ফ্যাসিস্ট অপশক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই একজোট।”
হাসনাতের ওপর হামলার বিবরণ ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
হামলার বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে এনসিপির আরেক মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। তিনি ওইদিন সন্ধ্যায় ফেসবুকে লেখেন, “হাসনাতের গাড়িতে গাজীপুরে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। গাড়ির গ্লাস ভেঙে গিয়েছে, হাসনাত ভাইয়ের হাত রক্তাক্ত হয়েছে। আশপাশে যারা আছেন দ্রুত তাকে রক্ষা করুন।”
সারজিস ওই পোস্টে ঘটনার লোকেশন জানিয়ে নেতাকর্মীদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার আহ্বান জানান। এতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং এনসিপির কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
হামলার স্থান হিসেবে গাজীপুরের ব্যস্ত চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার কথা জানানো হয়, যেখানে জনসমাগম এবং নিরাপত্তা সাধারণত ঘন থাকে। এত মানুষের মাঝে এমন প্রকাশ্য সন্ত্রাসী হামলা স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ জনগণ।
পুরোনো হামলার প্রসঙ্গ: হুমকি কি আগে থেকেই ছিল?
এই হামলা আকস্মিক নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে, গত বছরের ২৭ ও ২৮ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তান ও মাতুয়াইলে হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িকে চাপা দেয়ার চেষ্টা হয়। ঐ সময়েও তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
সেই ঘটনার কোনো বিচার হয়নি বলেই হয়তো হামলাকারীরা আরও সাহস পেয়েছে বলে ধারণা করছেন এনসিপির নেতারা।
রাজনৈতিক বার্তা: “আমরা একা নই”
ছাত্রশিবিরের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত, তারা একে অপরের পাশে থাকবে। এর অর্থ রাজনৈতিকভাবে নতুন একজোটের ইঙ্গিতও হতে পারে বলে বিশ্লেষক মহলের ধারণা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, হামলা ও হুমকি এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় যে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু এনসিপি বা শিবির নয়—বৃহত্তর বিরোধী রাজনৈতিক বলয়ের দিকেও ইঙ্গিত করছে।
শেষ কথা: হামলার বিচার না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ
এই ধরনের রাজনৈতিক হামলা শুধু ব্যক্তিকে নয়, গোটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। নইলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক হিংসা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।