close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

হাসিনা সরকারের পতনের পর ১০ মাসে ২৭ হাজার সন্দেহজনক লেনদেন! একাই ৩৫০টি বাড়ির মালিক এক দুর্নীতিবাজ!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাত্র ১০ মাসেই সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজারে! বিদেশে পাচার করা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা! এক দুর্নীতিবাজ কিনেছেন একাই ৩৫০টি বাড়ি!..

শেখ হাসিনার শাসন পতনের পর ভয়াবহ অর্থপাচার, বিদেশে বাড়ির পাহাড়!

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের আর্থিক খাতে নেমে এসেছে বিশৃঙ্খলার ছায়া। বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৫ মে পর্যন্ত মাত্র ১০ মাসে দেশে ২৭ হাজার ১৩০টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট (STR) জমা পড়েছে।

এটি আগের পুরো অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৭৯ শতাংশ বেশি। এমন ভয়াবহ বৃদ্ধি বাংলাদেশে আগে কখনো দেখা যায়নি। আর এই অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে – সাবেক সংসদ সদস্য, সরকার-বেসরকারি খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।


 আগের তুলনায় আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএফআইইউ শনাক্ত করেছিল ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন, যা তার আগের বছরের তুলনায় ছিল প্রায় ২৩% বেশি। কিন্তু বর্তমান বছরেই এই সংখ্যা লাফিয়ে বেড়ে ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে, এবং পুরো বছর শেষ না হতেই আগের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে।

বিএফআইইউ জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই থেকে রিপোর্টিংয়ের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, যা এই খাতের নাজুক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।


পাচার হওয়া অর্থের অঙ্ক ভয়াবহ!

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, একজন দুর্নীতিবাজ একাই কিনেছেন ৩৫০টি বাড়ি — যার বেশিরভাগই বিদেশে। এসব অর্থের উৎস ছিল ব্যাংক ঋণ, যা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা এগুলো শনাক্ত করতে পেরেছি। এখন লক্ষ্য হচ্ছে এই অর্থগুলো ফিরিয়ে আনা।”


ফেরত আনার উদ্যোগ, কিন্তু দীর্ঘ পথ

অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার এখন ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্তে নেমেছে। এসব তদন্তে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা — যেমন বিশ্বব্যাংকের এসটিএআর, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস, আইসিএআর, আইএসিসিসি ইত্যাদি।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়েও অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল, এতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৫ বছর


নতুন আইনের চিন্তা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাসের উদ্যোগ

গভর্নর বলেন, “আমরা কেউ এত বড় পরিসরে অর্থপাচার ঠেকানোর অভিজ্ঞতা আগে পাইনি। তাই নতুন করে আইনি কাঠামো সাজানো হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কাউকে জেলে নিয়ে হয়রানি করতে চাই না, বরং আদালতের বাইরে সমাধানের চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য পাচারকারীদের চাপ দিয়ে অর্থ ফেরত আনা।”


সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি

বিএফআইইউ-এর তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে তদন্ত সংস্থার কাছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩.৯১ শতাংশ বেশি। এছাড়াও তথ্য বিনিময় হয়েছে ১,২২০টি, যা এই খাতের কার্যক্রমের গতিশীলতা নির্দেশ করে।


অর্থপাচার ও হুন্ডি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি

বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম বলেন, “অর্থপাচার ও হুন্ডি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও লেনদেন ভারসাম্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”

তিনি নিশ্চিত করেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার আন্তঃমন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।


 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে সন্দেহজনক লেনদেন ও অর্থপাচার এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে যা পুরো জাতির জন্য অশনি সংকেত। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে শুরু হওয়া উদ্যোগগুলো কতটা কার্যকর হবে এবং পাচার হওয়া অর্থ কতটা ফেরত আসবে, তা সময়ই বলে দেবে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator