ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরও পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের অন্তত ছয় সদস্য নিহত হয়েছেন। এই হামলার পরপরই ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ-সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি বাতিল করায় যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে নতুন করে মানবিক সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) গাজার আল-জাওয়াইদা শহরে এই বিমান হামলা চালানো হয়। হামলায় আল-কাসেম ব্রিগেডের জাবালিয়া ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ** ইয়াহিয়া আল-মাবহুহ-সহ ছয় যোদ্ধা নিহত** হন। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, তাই এই অভিযান চালানো হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী আল-কাসেম ব্রিগেডের জাবালিয়া ব্যাটালিয়নের অবস্থান লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনুস শহরের মাঝামাঝি অবস্থিত আল-জাওয়াইদা শহরের উপকূলে একটি তাঁবুর ভেতরে স্থাপিত ছোট ক্যাফে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। নিহত কমান্ডার ইয়াহিয়া আল-মাবহুহ ছিলেন হামাসের অন্যতম জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। যুদ্ধবিরতির মাঝে তার এই মৃত্যু আল-কাসেম ব্রিগেডের জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামলার পর ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত রাখা হয়েছে। একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে বলেন, "হামাস প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, তাই গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো আপাতত বন্ধ থাকবে।" ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি ভাঙার অভিযোগ তুলেছে।
অন্যদিকে, হামাস ইসরায়েলের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলই গাজায় বারবার বিমান হামলা চালিয়ে শান্তি চুক্তিকে অকার্যকর করে তুলছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর প্রতিদিন শত শত ট্রাক ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গাজায় প্রবেশ করছিল। কিন্তু নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে লাখো গাজার নাগরিক, যারা খাদ্য, ওষুধ ও পানীয় জলের জন্য ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল, তারা চরম দুর্ভোগে পড়বেন। গত আগস্টে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন যে, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ত্রাণ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত সেই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করতে পারে।