হাইকোর্টের আদেশ, ইসির গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে ঝড় উঠতে পারে!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ১০ মার্চে প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি হাইকোর্টের শক আদেশে স্থগিত। কেন এই বিজ্ঞপ্তি অবৈধ ঘোষণা করা হবে না – তা জানতে রিটে রুল জারি হয়েছে। বিস্তারিত জানতে নি..

বৃহৎ রাজনৈতিক পরিবর্তনের সংকেত দিতে পারে এমন এক নোটিশ—নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আহ্বান নিয়ে ১০ মার্চ নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি, যা আজকে হাইকোর্টের শৃঙ্খলার তলদেশে পড়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ জারি করে গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা অবিলম্বে স্থগিত করার নির্দেশ দেয়।

এই শক আদেশে রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত খুলতে চাওয়া সেই সব দলের জন্য বাঁধা আর বাধে পরিণত হতে যাচ্ছে, যারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নতুন বিধিমালার আলোকে নিজেদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে প্রস্তুত ছিল। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যুক্ত বিভিন্ন শর্ত ও নীতিমালা, যা ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ক ও ২০০৮ সালের বিধিমালায় নির্ধারিত, তা এখন আইনের বেলা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।

আইনের কড়া স্পষ্টতা ও চ্যালেঞ্জ
নতুন গণবিজ্ঞপ্তির মর্মস্পর্শী ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নির্বাচনী কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ফরম-১ পূরণ করে ২০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম এই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে রিট দায়ের করেন। তাঁর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবেদা গুলরুখ রোববার (১৬ মার্চ) সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।

রিটের মূল বক্তব্য হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের আলোকে আবেদন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তিটি আইনের কর্তৃত্বকে প্রভাবিত করে এমন একটি প্রক্রিয়া, যা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। রিটে রুল চাওয়া হয়েছে কেন এই গণবিজ্ঞপ্তি অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এবং একইসঙ্গে এর কার্যক্রম স্থগিত করার আবেদন উঠানো হয়েছে। রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধানসহ চারজনকে বিবাদী হিসেবে নামزد করা হয়েছে।

নিয়মাবলী ও শর্তের পর্যালোচনা
নতুন গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য প্রার্থীদের অবশ্যই ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ক অনুযায়ী এবং ২০০৮ সালের বিধিমালায় নির্ধারিত শর্তাবলি পূরণ করতে হবে। এতে প্রধানত প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নির্বাচনী শর্তাবলি যেমন – অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস, ন্যূনতম ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস প্রতিষ্ঠা, এবং প্রতিটি অফিসে অন্তত ২০০ ভোটারের তালিকাভুক্তি থাকা আবশ্যক।

তবে, রিটে আবার তোলা হয়েছে যে, আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ১০০ উপজেলা ও ২২ জেলায় দলের কমিটি থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছু পার্বত্য ও পাহাড়ি অঞ্চলে শুধুমাত্র ২০টি উপজেলা থাকায়, সেখানে আগ্রহী হলেও কোন দলের নিবন্ধন হওয়ার সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়ছে। ২০১১ সালে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এই শর্ত যুক্ত করা হয়েছিল, যার ভিত্তিতে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছিল যে, ৫ শতাংশ উপজেলায় ও ১০ শতাংশ জেলা কমিটি সহ সর্বমোট ৫ হাজার সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত হলে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সমর্থনযোগ্য হবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অস্থিরতা ও প্রশ্নের মিছিল
এই বিজ্ঞপ্তি শুধু আইনি প্রক্রিয়াকেই নয়, বরং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও ছুঁয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আইনের স্পষ্টতা ও সামঞ্জস্যের অভাব থেকে আসা এই প্রশ্নগুলো রাজনৈতিক আন্দোলনের নতুন দিশা নির্দেশ করতে পারে। বহু রাজনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, নীতিগত অস্পষ্টতা ও প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের প্রক্রিয়া রাজনৈতিক খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

প্রথম দিকে উদ্দীপ্ত হওয়া সেই নবীন রাজনৈতিক দলগুলোর আশা, এখন আইনের কঠিন বাধায় রুক্ষভাবে পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, আইনি ও প্রশাসনিক দিক থেকে সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী অপরিহার্য, যা না থাকলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা ছড়াতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সম্ভাব্য প্রভাব
বর্তমানে আইনের এই জটিলতা ও অনিশ্চয়তার মাঝে বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাইকোর্টের শক আদেশ যদি স্থায়ী হয়, তবে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক রূপান্তর ঘটতে পারে। একইসঙ্গে, এই আদেশ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে, যেখানে আইন ও নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সঙ্গতি রক্ষা করা হবে।

আইনের কড়া ব্যাখ্যা ও প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রয়াসে, বিচারব্যবস্থার এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক খাতে নতুন আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "আদালতের এই রুল নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আইনি সঠিকতা ও সমতা নিশ্চিত করবে"। তবে, বিপক্ষের কণ্ঠে আছে যে, আদেশটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে প্রচুর সম্ভাব্য রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

ভবিষ্যৎ শুনানির দিগন্ত ও প্রত্যাশা
আজকের শক আদেশের পর, হাইকোর্টের শৃঙ্খলার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনগুলোতে আরও বিস্তারিত শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারপতি ও আইনজ্ঞরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরবর্তী শুনানিতে রিটের পক্ষে নতুন যুক্তি ও আইনি দলিল উপস্থাপন করার সম্ভাবনা রয়ে গেছে।

প্রকাশ্যে আসা এই রিট শুধু আইনি প্রক্রিয়াকেই নয়, বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সরকারি নির্দেশিকা, আইনের প্রাসঙ্গিকতা, ও প্রয়োজনীয় শর্তাবলী সম্বন্ধে যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, তা থেকে একটি নতুন রাজনৈতিক জাগরণের সম্ভাবনা ধরা পড়েছে।

উপসংহার ও রাজনৈতিক আলোড়ন


সমগ্র রাজনৈতিক খাতে এই শক আদেশ একটি বিশেষ ধরণের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনী কমিশনের ১০ মার্চের গণবিজ্ঞপ্তি, যা একদিকে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আহ্বান জানাচ্ছিল, অন্যদিকে আইনি ও প্রশাসনিক শর্তাবলীর ত্রুটির কারণে আজ হাইকোর্টের শক আদেশে স্থগিতের মুখোমুখি হয়েছে। বিচারব্যবস্থার এই পদক্ষেপ আগামী দিনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই জানাবে।

সর্বোপরি, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যে অস্থিরতা ও প্রশ্ন উঠেছে, তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও আইনি নীতির পুনঃমূল্যায়নের আহ্বান জানাচ্ছে। ভবিষ্যৎতে আরও স্পষ্ট ও সুসংগঠিত নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়ন সম্ভব হলে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া হতে পারে আরও স্বচ্ছ ও সমতা নির্ভর। আজকের এই শক আদেশ ও এর প্রভাব, নতুন দিনের রাজনৈতিক দিগন্তে কতটা প্রভাব বিস্তার করবে—এটাই আসন্ন শুনানির মূল প্রশ্ন হিসেবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।

No se encontraron comentarios