বিশ্ব রাজনীতির উত্তপ্ত কেন্দ্রবিন্দুতে আবারও ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। ইসরায়েলের টানা হামলার বিরুদ্ধে এবার কঠোর বার্তা দিলো ইরান। জানিয়ে দিল, যুদ্ধ বন্ধ না হলে তারা আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরমাণু বিষয়ে কোনো আলোচনায় বসবে না।
ঘটনার সূচনা গত রাতের পাল্টাপাল্টি হামলার পর। ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে কেঁপে উঠে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চল। জবাবে ইসরায়েল ধ্বংস করে ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি। সেই সঙ্গে বিস্ফোরণ হয় তেলআবিভে, একাধিক ভবনে আগুন। পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে যে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াল জামির নিজেই বলেন—“আমরা দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সামনে আরও কঠিন সময় আসছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জেনেভায় ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্পষ্ট জানিয়ে দেন—“ইসরায়েল যদি হামলা বন্ধ না করে, তাহলে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা অসম্ভব। ইরান আত্মরক্ষার অধিকার থেকে সরে আসবে না।
তিনি আরও বলেন, “আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত, কিন্তু আগে আগ্রাসন থামাতে হবে। পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।”
তবে একইসাথে তিনি কঠোর বার্তা দেন: “ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে কোনো আলোচনা চলবে না। সেটা আমাদের জাতীয় অধিকার।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিস্থিতি ঠেকাতে স্পষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন ইরানের জন্য। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি ইরানকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছি। এর মধ্যে যদি তারা আক্রমণ থামিয়ে আলোচনায় না আসে, তাহলে আমেরিকার বিমান হামলা থেকে রেহাই পাবে না।”
তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত হয়তো সময়ের আগেই নেওয়া হতে পারে।
ট্রাম্প আরও বলেন, “ইরান আমাদের সাথে কথা বলতে চায়। ইউরোপের কোনো ভূমিকা নেই। তারা শুধু সময় নষ্ট করছে।
এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইরানকে আলোচনায় ফেরাতে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এখনো সময় আছে আলোচনায় ফিরতে হবে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন নোয়েল ব্যারট বলেন, “জোর করে ইরানে সরকার পরিবর্তন করতে চাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়া বিকল্প নেই।
শুক্রবার, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের হাইফা শহরের ওপর ছোড়া হয় অন্তত ২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এক নারী হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যান, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫-এ।
ইসরায়েলি আইডিএফ জানিয়েছে, তারাও ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে বড়সড় পাল্টা হামলা চালিয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী ইরানের বহু সামরিক স্থাপনা ও অস্ত্রাগার ধ্বংস করেছে বলে দাবি করেছে তারা। নিহত হয়েছেন একাধিক সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২২৪ জন ইরানিয়ান নাগরিক নিহত হয়েছেন। তবে বেসরকারি একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা ৬৩৯।
তেহরানের দাবি, ইসরায়েলের চলমান হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে এবং এটি 'গণহত্যার এজেন্ডা' বাস্তবায়নের একটি অংশ। এ বিষয়ে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা হামলা বন্ধ করবো না, যতক্ষণ না ইরানের পরমাণু অস্ত্র স্থাপনা ধ্বংস হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব এবার শুধু কূটনৈতিক চাপেই সীমাবদ্ধ থাকছে না—এটি সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। পরমাণু অস্ত্র, রাজনৈতিক দম্ভ এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ—সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এখন এক অশনি সংকেতের মুখোমুখি।



















