একান্ত নীরবতায় নায়িকা: নুসরাত ফারিয়ার জীবনে ঝড়, এখন শয্যাশায়ী
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা নুসরাত ফারিয়া ছিলেন রীতিমতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে ঈদুল আজহায় মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর দুটি সিনেমা—বাংলাদেশে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ও কলকাতায় ‘রকস্টার’। অন্যদিকে রয়েছে আরও তিনটি আলোচিত ছবি—‘মুজিব’, ‘ভয়’ এবং ‘পাতালঘর’। সবমিলিয়ে ছিল তাঁর দারুণ ব্যস্ত সময়। তবে এই তারকার জীবনে হঠাৎ করেই নেমে আসে অন্ধকার।
মাত্র কয়েক দিন আগেই পুরনো একটি মামলার জেরে গ্রেপ্তার হন নুসরাত ফারিয়া। ১৯ মে সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে হাজিরা, হুলস্থুল পরিস্থিতি আর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেন তাঁকে একেবারে ভেঙে দিয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকেই নুসরাত ফারিয়া রয়েছেন একান্ত নীরবতায়। শারীরিকভাবে তিনি গুরুতর অসুস্থ। মানসিকভাবেও চরম ধাক্কা খেয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁর চিকিৎসকের কড়া পরামর্শ—সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে এবং ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ফলে ভক্ত, সাংবাদিক বা কাছের মানুষদের সঙ্গেও এখন তিনি কোনো যোগাযোগ রাখতে পারছেন না।
আজ ২৩ মে, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন তিনি। সেখানে ফারিয়া লেখেন,
“আমি জানি, আপনারা অনেকেই আমার খোঁজখবর, ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করছেন। আপনাদের ভালোবাসা ও উদ্বেগ আমাকে সত্যিই ছুঁয়ে যাচ্ছে। তবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, বর্তমানে আমি গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছি এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছি।”
এই পোস্টে তিনি আরও জানান, চিকিৎসকের কড়া নির্দেশনার কারণে ফোন ব্যবহার করতেও পারছেন না। যার কারণে কেউ যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী ছিল তাঁর এই কথাগুলো—
“গত কয়েকদিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ ও সংবেদনশীল সময়। মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু আপনাদের ভালোবাসা, সমর্থন ও সাহচর্য আমাকে এগিয়ে চলার শক্তি দিয়েছে।”
এই স্বীকারোক্তি প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভক্তদের আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে। কেউ লিখেছেন, “তুমি আমাদের শক্তি, ফিরে এসো সুস্থ হয়ে।” কেউ কেউ আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণকে ‘বিব্রতকর’ বলেও অভিহিত করেছেন।
উল্লেখ্য, তাঁর গ্রেপ্তার এবং জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও শুরু হয় বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, জনপ্রিয় তারকার সঙ্গে এমন আচরণ কতটা যৌক্তিক ছিল?
আশার আলো: “খুব শিগগিরই আবার দেখা হবে”
সবকিছু সত্ত্বেও হতাশায় ডুবে না গিয়ে ফারিয়া তাঁর বার্তার শেষভাগে আশা জাগান। তিনি লেখেন,
“আমি বিশ্বাস করি, এই কঠিন সময়টা দ্রুতই পেরিয়ে আবার সুস্থভাবে আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারব… খুব শিগগিরই আবার দেখা হবে।”
ভক্তদের জন্য এটি যেন একবিন্দু প্রশান্তির বার্তা। তাঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করে ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে শুভকামনার বন্যা।
নুসরাত ফারিয়ার এই মুহূর্তের বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জনপ্রিয়তার আড়ালে তারকারাও মানুষ। তারাও কষ্ট পান, ভেঙে পড়েন এবং চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। আশা করা যায়, প্রিয় অভিনেত্রী খুব শিগগিরই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে—আগের মতোই প্রাণবন্ত, হাস্যোজ্জ্বল, অনবদ্য।