close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

গত সতেরো বছরেও মন্দিরে হামলার বিচার না হওয়ায় গভীর হতাশা: নাসিরুল ইসলাম..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দীর্ঘ ১৭ বছরেও মন্দির ভাংচুরের কোনো বিচার না হওয়ায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন আলোচক নাসিরুল ইসলাম। এই অভিযোগ রাষ্ট্রের বিচারিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।..

দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ঘটে যাওয়া হামলা ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় দীর্ঘ সতেরো বছর পরও বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন আলোচক নাসিরুল ইসলাম। 'কালের কণ্ঠ' আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁর এই মন্তব্য রাষ্ট্রের বিচারিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার নিয়ে জনমনে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

নাসিরুল ইসলামের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সময়ে সময়ে ধর্মীয় উত্তেজনা ও সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। আলোচকের মতে, সতেরো বছর ধরে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা শুধু ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করাই নয়, বরং এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাতেও উৎসাহিত করছে। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে ১৭ বছরের সময়সীমা উল্লেখ করে এই ব্যর্থতাকে রাষ্ট্রের একটি কাঠামোগত দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

আলোচকের এই বক্তব্য কেবল একটি বিচ্ছিন্ন অভিযোগ নয়, এটি মূলত দেশে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার না হওয়ার প্রতিচ্ছবি। যখন উপাসনালয়ে হামলার মতো সংবেদনশীল ঘটনার বিচার আটকে যায়, তখন সাধারণ মানুষ ও বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করে। এই দীর্ঘসূত্রিতা সমাজে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সংখ্যালঘু নেতা মনে করেন, মন্দির ভাংচুরের ঘটনার বিচার না হওয়া প্রমাণ করে যে, তাদের জানমাল ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যথেষ্ট সচেষ্ট নয়। এই বিচারহীনতা তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে অনুভব করতে বাধ্য করে।

এই বক্তব্যটির একটি গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, সেখানে এ ধরনের অভিযোগ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ ধরনের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, মন্দির ভাংচুরের ঘটনাগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও তদন্তে গাফিলতি থাকে। অভিযোগ ওঠে যে, রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্বল তদন্তের কারণে মামলার নথি দুর্বল হয়ে পড়ে, যা আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন করে তোলে। এই প্রশাসনিক ব্যর্থতাও বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম প্রধান কারণ।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার না হওয়া কেবল সামাজিক সমস্যা নয়, এর অর্থনৈতিক প্রভাবও সুদূরপ্রসারী। নিরাপত্তা ও বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকা উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা দেশত্যাগ করতে বা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দীর্ঘসূত্রিতার কারণ হিসেবে প্রায়শই আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতাকে দায়ী করা হয়। মামলা দায়ের, সাক্ষ্য সংগ্রহ, চার্জশিট দাখিল এবং উচ্চ আদালতে আপিলের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় সতেরো বছরের মতো সময় পার হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে ন্যায়বিচারের নীতি অনুযায়ী, এই দীর্ঘসূত্রিতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

যদিও আলোচক নাসিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বিচার না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন, তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে পূর্বে প্রতিটি হামলার পরই সরকার দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির অঙ্গীকার করেছে।

নাসিরুল ইসলামের এই বক্তব্য আগামী দিনে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একমাত্র পথ।

'কালের কণ্ঠ'-এর মাধ্যমে এই গুরুতর বিষয়টি জনসমক্ষে আসায় গণমাধ্যমের ভূমিকার গুরুত্ব আবারও প্রতিষ্ঠিত হলো। এমন সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকলে তা সরকার ও প্রশাসনকে বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বাধ্য করবে।

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক ঐক্য বজায় রাখার জন্য এ ধরনের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরিহার্য। বিচার নিশ্চিত হলে তা সকল নাগরিকের মধ্যে আস্থা ফেরাবে এবং ভবিষ্যতে হামলাকারীদের মনে ভীতি সঞ্চার করবে।

এই দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারের উচিত একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততার সাথে সাম্প্রদায়িক হামলা সংক্রান্ত মামলাগুলোর নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা।

没有找到评论


News Card Generator