জাতীয় নাগরিক পার্টির 'মার্চ টু গোপালগঞ্জ' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারো সহিংসতা—এবার সদর উপজেলার ইউএনও’র গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। আগেই পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়েছিল।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) 'মার্চ টু গোপালগঞ্জ' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার বৌলতলী ইউনিয়নের গান্দিয়াসুর এলাকায় দুর্বৃত্তরা অতর্কিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসানের গাড়িতে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে।
এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইউএনও নিজেই সাংবাদিকদের জানান, “আমি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাচ্ছিলাম, এমন সময় ২০ থেকে ৩০ জনের একটি মুখোশধারী দল হঠাৎ করে আমার গাড়ি ঘিরে ফেলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল দিয়ে গাড়ির সামনের ও পাশের কাচ ভেঙে ফেলে।
তবে সৌভাগ্যক্রমে ইউএনও ও তার সঙ্গে থাকা অন্য কেউ আহত হননি। ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীর একটি টহলদল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ইউএনও ও তার টিমকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে যায়। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদে রয়েছেন।
এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর সংযোগ সড়কে পুলিশের একটি গাড়িতে পেট্রলবোমা ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে গাড়ির সামনের অংশ পুড়ে যায়, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুরো জুলাই মাসব্যাপী চলছে ‘জুলাই পদযাত্রা’, যার আজকের কর্মসূচি ছিল ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’। এই পদযাত্রার অংশ হিসেবেই গোপালগঞ্জ শহরে পথসভা আয়োজন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ছাত্রলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি বড় অংশ কর্মসূচিতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে গেলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
অবস্থার অবনতি হলে আশপাশের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে অতিরিক্ত বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন সরকার জানিয়েছেন, “আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি এবং বর্তমানে এলাকা স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনসিপি’র একাধিক নেতার দাবি, ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ছিল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু প্রশাসন ও সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের হামলায় তা সহিংসতায় রূপ নেয়। অপরদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, “এই কর্মসূচির আড়ালে সরকারবিরোধী উসকানি ছড়ানো হচ্ছিল।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারবিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে বাধা, হামলা এবং প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়ার ফলে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
ঘটনার পর গোপালগঞ্জ শহরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের।
এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর গোপালগঞ্জে এমন ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা গেল। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
এখন দেখার বিষয়, এই সহিংসতার ঘটনায় কত দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় এবং আগামী কর্মসূচিগুলো কেমনভাবে সামাল দেওয়া হয়।