জাতীয় নাগরিক পার্টির গোপালগঞ্জ মার্চ কর্মসূচিতে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অভিযোগ তুললেন বিশ্লেষক মাসুদ কামাল। তিনি প্রশ্ন তোলেন— এই কর্মসূচিতে দেশের কী উপকার হলো?
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) 'মার্চ টু গোপালগঞ্জ' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল। তিনি এই কর্মসূচিকে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে বলেন, "একটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জেদের খেসারত কেন রাষ্ট্রকে দিতে হবে?"
তার মতে, এনসিপির ওই কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োগ ছিল, যা সাধারণত শুধুমাত্র সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সফরে বরাদ্দ থাকে। মাসুদ কামাল বলেন, "রাষ্ট্রপতি ঢাকার বাইরে গেলে প্রতি ঘণ্টায় ৭২ লাখ টাকা এবং প্রধানমন্ত্রী গেলে ৮১ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই এনসিপির কর্মসূচিতে সাঁজোয়া যান পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে— যা রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী সফরেও থাকে না।"
তিনি আরও জানান, একজন নির্ভরযোগ্য সূত্র তাকে জানিয়েছেন যে, এই ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে প্রায় ৮ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। মাসুদ কামালের ভাষায়, একটি অনিবন্ধিত দলের একটি কর্মসূচি আয়োজনের পেছনে এতো বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জাতির সামনে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
তিনি বলেন, "এনসিপির একজন নেতা বলেছেন— মুজিবের জন্মভূমিতে দাঁড়িয়ে মুজিববাদ মুর্দাবাদ বলেছি’। প্রশ্ন হলো, এতে দেশের কী লাভ হয়েছে? এতে কি দেশের সম্মান বেড়েছে? বরং সাধারণ মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।
মাসুদ কামাল বলেন, আমি সবসময়ই চাই একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠুক। এনসিপি যদি সত্যিই জনগণের দল হতে চায়, তাহলে তাকে জনগণের হৃদয়ে প্রবেশ করতে হবে। হিংসা ছড়িয়ে বা আতঙ্ক তৈরি করে সেটা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, এই তরুণদের মধ্যেই সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চাই তারা যেন ভালো কিছু করে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাগুলো তারা যেন নিজেরাই নষ্ট না করে ফেলে। হিংসা দিয়ে কোনো রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয় না— ভালোবাসাই পারে মানুষের মন জয় করতে।
এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মাসুদ কামাল মূলত রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও দায়িত্বশীলতার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার মতে, রাজনীতি যদি মানুষের কল্যাণে না আসে, তবে তা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। আর সে কারণেই রাজনীতি মানে শুধু স্লোগান নয়, রাজনীতি মানে দায়িত্ব, পরিপক্বতা, এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা।
এখন দেখার বিষয়— মাসুদ কামালের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তবে নিঃসন্দেহে এই প্রশ্ন সামনে এনেছে— অনিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয় কতটা গ্রহণযোগ্য?