ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে মুসলিমদের উচ্ছেদ ও বাংলাদেশে বিতাড়ন করছে ভারত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
India demolishes homes of Assamese Muslims and pushes them into Bangladesh amid rising political tensions and anti-Muslim crackdowns before elections.

আসামে মুসলিমদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে, বাংলাদেশে পুশব্যাক করছে ভারত। দমন অভিযানে প্রাণহানিও ঘটছে, উদ্দেশ্য রাজনীতিক মেরুকরণ।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী। স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে গত কয়েক সপ্তাহে হাজার হাজার মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই উচ্ছেদ অভিযানের শিকার মানুষদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দা, যাদের এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে, আসামে আসন্ন রাজ্য নির্বাচনকে ঘিরে এই অভিযানের মাত্রা বেড়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের ২৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তঘেঁষা এলাকায় অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাস করছে শত শত মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশু। বুলডোজারে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে তাদের স্বপ্ন, নিরাপত্তা ও পরিচয়ের ভিত্তি।

সরকারি দাবি, এসব মানুষ ‘অবৈধভাবে’ সরকারি জমিতে বসবাস করছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অনেকেই বলছেন, তারা ভারতেই জন্মেছেন, সেখানে বড় হয়েছেন এবং বৈধ নথিপত্র থাকার পরেও তাদের 'অনুপ্রবেশকারী' ও 'বিদেশি' আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। যেমন, গোলপাড়া জেলার ৫৩ বছর বয়সী আরান আলী বলেন, “সরকার বারবার হয়রানি করে। আমরা তো এখানেই জন্মেছি। তবু আমাদের বিদেশি বলা হয়।”বিশ্লেষকদের মতে, আসামের এই উচ্ছেদ অভিযান একটিকে বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি আগামী নির্বাচনে আবারো ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। তাই হিন্দু ভোটারদের মন পেতে মুসলিমদের টার্গেট করে এই দমন নীতি গ্রহণ করেছে তারা। বিরোধী নেতারা স্পষ্টভাবে বলছেন, এটি ভোটারদের ধর্মীয় ভিত্তিতে মেরুকরণ করার একটি পরিকল্পিত প্রয়াস।

২০১৯ সালে বিজেপি নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে অমুসলিম অনথিভুক্ত অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্বের পথ খুলে দিলেও মুসলিমদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করেছে, যাদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম।

এই দমন নীতির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, “অবৈধ অভিবাসী শনাক্তের নামে ভারত হাজার হাজার দুর্বল মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এর মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিফলন ঘটছে।”

আসামের ট্রাইব্যুনালগুলো প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করেছে, যদিও এদের অধিকাংশই বহু বছর ধরে ভারতে বসবাস করছেন এবং অনেকেই ভুলক্রমে এই তালিকায় পড়ে গেছেন। আর্থিকভাবে অসহায় এসব পরিবার আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও রাখে না।

আসাম সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ২ হাজার ৩৬৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে এবং ঢাকাকে এই যাচাই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকারকে ভারতপন্থি বিবেচনায় এনে তার পতনের পর ভারতীয় রাজনীতিতে বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়েছে। এই ক্ষোভ এখন দমন নীতির মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ নাম দিয়ে এসব মুসলিমদের উচ্ছেদ এবং সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনা জোরদার হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক প্রভীন দন্তি বলেন, “আসামের রাজনীতিতে আগে ছিল জাতিগত জাতীয়তাবাদ। কিন্তু এখন বিজেপির ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে বাংলাভাষী মুসলিমদেরই মূল লক্ষ্য বানানো হয়েছে।”

উচ্ছেদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। শুধু গত এক মাসেই আসামের পাঁচটি জেলায় ৩ হাজার ৪০০ মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে কাশ্মিরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের দায়ী করে আসামসহ বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলো হাজার হাজার মুসলিমকে ‘নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করছে।

এই উচ্ছেদ অভিযানে মুসলিমদের মানবাধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। কেউ শোবার বিছানা পাচ্ছেন না, কেউ খাবার জোটাতে পারছেন না। বাচ্চাদের স্কুল জীবন থেমে গেছে, বয়স্করা চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে এবং বাংলাদেশও এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে না।

نظری یافت نشد