মাত্র চার বছর আগেও যে কূটনৈতিক ঐক্য ছিল অকল্পনীয়, সেই পটভূমিতে গাজা পুনর্গঠন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে মিসর, তুরস্ক ও কাতার। একসময়ের শত্রু এই তিন দেশ যৌথ এক নথিতে স্বাক্ষর করেছে, যা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
এই ঐক্যের মূল লক্ষ্যগুলো হলো—যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা, উপত্যকার বাজেট পুনর্গঠন করা এবং হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পরিকল্পনা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শনিবার 'গার্ডিয়ান'-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজা উপত্যকাকে সুরক্ষিত করতে গঠিত হতে যাওয়া সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীকে (আইএসএফ) নেতৃত্ব দেবে মিসর। এই বাহিনী যুদ্ধ-পরবর্তী ক্রান্তিকালে বিধ্বস্ত গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো বর্তমানে এমন একটি প্রস্তাব তৈরি করছে, যা আইএসএফকে জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের অধীনে কাজ করার সুযোগ দেবে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে বিবেচিত হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান আরও জানায়, সম্ভবত মিসর এই বহুজাতিক বাহিনীর নেতৃত্বে থাকবে। যদিও কায়রো এখনো এই বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য বিবৃতি বা সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
এদিকে, আইএসএফ মিশনে সমর্থন জোগাড়ের জন্য আমেরিকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই মিশনে সেনা পাঠানোর জন্য প্রকাশ্যে প্রস্তাব দেওয়া একমাত্র দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া, যারা গত মাসে জানিয়েছে গাজায় তারা ২০ হাজার সেনা পাঠাবে। ইন্দোনেশিয়া স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তাদের সেনারা জাতিসংঘের নির্দেশিত শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে থাকবে।
জানা গেছে, আজারবাইজানও এই মিশনে সেনা পাঠাতে সম্মত হয়েছে। তবে আমেরিকা ও ইসরাইলে থাকা আজারবাইজানের দূতাবাস এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে, গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক বৈঠকের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ট্রাম্পকে বলেছিলেন যে আঙ্কারা গাজায় সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। তবে গাজা যুদ্ধের ফলে তুরস্ক-ইসরাইল সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায়, ইসরাইল গাজায় তুর্কি বাহিনীর উপস্থিতি মানবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ট্রাম্পের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা সম্প্রতি জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সেনা পাঠাতে না চাইলেও, তারা এই মিশনের জন্য তহবিল কিংবা প্রশিক্ষণে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে। এছাড়া, বিভিন্ন 'আরব ও মুসলিম' দেশসহ আরো অনেকে এই মিশনে সেনা পাঠাতে গোপনভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে বলেও তিনি জানান।
একদা-শত্রু দেশগুলোর এই ঐক্য এবং আইএসএফ গঠনের উদ্যোগ যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় স্থায়ী শান্তি ও পুনর্গঠনের পথে এক নতুন কূটনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।