ইসরায়েলি বাহিনী যখন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে ধ্বংসের দাবি করছে, তখনই প্রকাশ্যে এলো চমকে দেওয়া তথ্য—৪০ হাজার যোদ্ধা গাজায় প্রস্তুত। সাবেক জেনারেলের ভাষায়, প্রতিরোধ এখন আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী ও সংগঠিত।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর তথাকথিত “সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান” কার্যত রূপ নিয়েছে এক ভয়াবহ গণহত্যার ধারাবাহিকতায়। ২১ মাসের এই বর্বর আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৭,০০০ বেসামরিক ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক। ধ্বংস হয়ে গেছে স্কুল, হাসপাতাল, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট—এক কথায় পুরো উপত্যকাই রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, তারা হামাসসহ ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর প্রায় সবটুকুই ধ্বংস করে ফেলেছে, তবে এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইসরায়েলি বাহিনীরই সাবেক মেজর জেনারেল ইয়েজহাক ব্রিক একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে লিখেছেন—ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ এখন আরও বেশি সংগঠিত, এবং প্রায় ৪০ হাজার সক্রিয় যোদ্ধা নিয়ে তারা গাজায় প্রস্তুত।
ব্রিকের এই লেখা প্রকাশিত হয়েছে ইসরায়েলের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক Maariv-এ। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, এই ৪০ হাজার যোদ্ধা মূলত হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সদস্য, যারা আবার নতুন করে সংগঠিত হয়ে গেছে। তারা এখনো ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে এবং গেরিলা যুদ্ধের কৌশলেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিরোধ।
ব্রিক বলেন, “এই প্রতিরোধ কোনো প্রথাগত সেনাবাহিনী নয়। এটি একটি ছায়া-সেনা ব্যবস্থা, যাদের নেই নির্দিষ্ট কমান্ড সেন্টার বা ঘাঁটি। তাই ‘ধ্বংসের’ দাবি অর্থহীন।” তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল যতই দাবি করুক প্রতিরোধ শেষ হয়ে গেছে—বাস্তবতা হলো, প্রতিরোধ এখন আগের চেয়েও বেশি সমন্বিত, প্রশিক্ষিত ও সাহসী।
তিনি জানিয়েছেন, গাজায় প্রতিরোধ যোদ্ধারা এখনো নানা পরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা করছে। বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে হামলা চালানো, জটিল সুড়ঙ্গ ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে যাতায়াত ও অস্ত্র পরিবহন, এমনকি টার্গেট অনুযায়ী চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালানো হচ্ছে।
ব্রিকের ভাষায়, “গাজার প্রতিটি শহীদের রক্ত এই প্রতিরোধকে আরও শাণিত করে তুলেছে। এটা শুধু অস্ত্রের লড়াই নয়, এটা চেতনার যুদ্ধ।
এই প্রতিরোধ কেবল টিকে নেই—বরং বেড়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর যারা ভেবেছিল হামাস শেষ, তারা এখন দেখছে—নতুন নেতৃত্ব, নতুন কৌশল ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে গাজায় ৪০ হাজার যোদ্ধা প্রস্তুত হয়ে আছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর বারবার দাবি করা “বিজয়” এখন নিজেরাই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সাবেক সামরিক নেতৃত্ব থেকেই উঠে আসছে ভিন্ন বার্তা—এই যুদ্ধ একদিকে সামরিক শক্তির, আর অন্যদিকে জনগণের আত্মত্যাগ, মনোবল ও প্রতিরোধের চেতনার।
ফিলিস্তিনের জনগণ এখন যেন আরও বেশি একত্রিত। প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উঠে আসছে প্রতিরোধের নতুন চেতনাধারা। আন্তর্জাতিক মহল চুপ থাকলেও গাজার মাটি যেন বলতে চাইছে—এই সংগ্রাম থামবে না, যতক্ষণ না মুক্তি আসে।