গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উত্তাল বিক্ষোভ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ, মিছিল ও মানববন্ধন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের নানা স্থানে শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন..

ঢাকাসহ সারা দেশে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে উত্তাল বিক্ষোভ

গতকাল সোমবার, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক বোমা হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ, মিছিল, মানববন্ধন এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপ’ শিরোনামে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুধু শিক্ষার্থী নয়, সাধারণ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। বিক্ষোভের মাধ্যমে গাজার হামলা ও গণহত্যা বন্ধের দাবি, ইসরায়েলের বিচারের আহ্বান এবং ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করার ডাক দেয়া হয়।

বিক্ষোভে ক্ষুব্ধ জনতা:

বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসি এবং পিত্জা হাটের মতো প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে, পেপসি এবং কোকা-কোলার সাইনবোর্ডও ভাঙচুর করা হয়। গতকাল সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে বিক্ষোভে যোগ দেয়। শান্তিপূর্ণভাবে প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানের মাধ্যমে তারা তাদের দাবি তুলে ধরেন, একই সঙ্গে গাজার জনগণের প্রতি সহমর্মিতা এবং সংহতি প্রকাশ করেন।

এছাড়া, মুসলিম বিশ্ব, ওআইসি এবং জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে প্রতিবাদ জানানো হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে 'নো ওয়ার্ক, নো স্কুল' কর্মসূচি পালিত হয়, যার ফলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস এবং পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ করেছে, এবং তাদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও যোগ দেন।

ঢাকায় বিক্ষোভের চিত্র:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজধানীর অন্যান্য স্থানগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ ঘটে। সকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। রাজু ভাস্কর্য ও টিএসসি এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। এছাড়া, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ পথচারীরা অংশ নেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক প্রতিবাদ:

এছাড়া, রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে সরব ছিলেন, তারা ‘শো ইসরায়েল দ্য রেড কার্ড’ প্ল্যাকার্ড হাতে রাজপথে নেমে আসেন।

প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বাড়ানো:

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এলাকায় বিক্ষোভের কারণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, গোয়েন্দা বাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে গুলশান এলাকার অন্যান্য দূতাবাসগুলোতে।

ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ:

ঢাকার বাইরে, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, যশোর, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে। সিলেট, রাজশাহী, এবং অন্যান্য শহরে বিক্ষোভের মাধ্যমে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন এবং গাজার জনগণের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়।

ছাত্রদলের বিক্ষোভ কর্মসূচি:

ফিলিস্তিনের গাজার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘কালো কাপড়’ পরিধান করে অবস্থান নেবেন এবং পরে সম্মিলিতভাবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমাবেশ করবেন।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি:

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরও সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, এর মধ্যে রয়েছে ৮ এপ্রিল সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, ৯ এপ্রিল ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, ১০ এপ্রিল স্মারকলিপি প্রদানসহ অন্যান্য কর্মসূচি।

এদিকে, ঢাবি শিক্ষকদের আহ্বান:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দল এবং অন্যান্য শিক্ষকেরা ফিলিস্তিনের গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে এবং ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধে বিশ্বের সমর্থন চেয়েছেন।

এছাড়া, আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সংগঠন ইসরায়েলি পণ্য বর্জন এবং অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

গাজার মানুষের প্রতি সহমর্মিতা:

এছাড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলো ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে এবং ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে।

চূড়ান্ত আহ্বান:

বিশ্ববাসীকে এক হয়ে এই বর্বরতা বন্ধ করার জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের জনগণ, শিক্ষার্থী, এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।

No comments found


News Card Generator