গায়েবি মামলার সংস্কৃতি ব্যবসায়ী সমাজে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে , হোসেন জিল্লুর রহমান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গায়েবি মামলার ভয়ে বিনিয়োগ স্থবির, বললেন হোসেন জিল্লুর। সরকারকে সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান তার। কৃষিকে প্রধান প্রবৃদ্ধির চালক হিসেবে তুলে ধরার পরামর্শও দেন তিনি।..

গায়েবি মামলার সংস্কৃতি ব্যবসায় অস্থিরতা বাড়াচ্ছে—সরকারকে সম্মিলিতভাবে এগোনোর আহ্বান হোসেন জিল্লুরের

বিনিয়োগ স্থবির, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্থিরতা, তরুণদের জন্য চাকরির সংকট—এই সবকিছুর মূলে যে ভয় আর অনিশ্চয়তা, তা এখন নতুন করে সামনে এলো ‘গায়েবি মামলা’র প্রসঙ্গে। রোববার (২২ জুন) রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত বাজেট সংলাপে এসব আশঙ্কার কথা জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং পিপিআরসির (পাবলিক প্রোকিউরমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।

সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) আয়োজিত এ সংলাপে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “পরশু চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী জানালেন, তিনি ১৭০ জন আসামির একটি মামলার ৯৫ নম্বর আসামি। এই ধরনের গায়েবি মামলার সংস্কৃতি ব্যবসায়ী সমাজে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।”

তিনি আরও বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয় একা কিছু করতে পারবে না। বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুরো সরকারকে সম্মিলিতভাবে এগোতে হবে।”

গায়েবি মামলা মানে অদৃশ্য বা কাল্পনিক অভিযোগে দায়ের করা মামলা, যার পেছনে কোনো বাস্তব ঘটনা নেই। এই ধরনের মামলা বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় তৈরি করছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, তারা না জেনেই হয়তো কোনো মামলায় অভিযুক্ত হয়ে যাবেন।

এমন প্রেক্ষাপটে হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, শুধুমাত্র বাজেট প্রণয়ন বা অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে ভাবলে হবে না, আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য জরুরি।

সংলাপে হোসেন জিল্লুর রহমান কৃষিকে আগামী দিনের প্রধান ‘গ্রোথ ড্রাইভার’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “ফার্মাসিউটিক্যালস ও আইসিটিতে সম্ভাবনা থাকলেও কৃষিই হবে আগামী দিনের মূল চালক।”

তবে তার মতে, এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষি খাতে আরও প্রযুক্তি, গবেষণা, এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে “ট্রাডিশনাল ও প্রুডেন্ট” (রক্ষণশীল ও বিচক্ষণ) বলে আখ্যা দেন হোসেন জিল্লুর, তবে তার মতে এটি “ইমপ্যাক্টফুল নয়”। তিনি বলেন, “এই বাজেটে প্রাইভেট সেক্টর, শ্রমিক শ্রেণি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কিছু নেই। বরং এতে বৈষম্যের ছাপ স্পষ্ট।”

বাজেটের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শুধু টেকনিক্যাল দক্ষতা যথেষ্ট নয়, কাঠামোর বাইরে যেতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও দরকার।

হোসেন জিল্লুর রহমান বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত বিশ্লেষণ করে বলেন, “এটি অবকাঠামোগত বাজেট হলেও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুব বেশি কিছু নেই।”

তাই তিনি পরামর্শ দেন, আগামী ডিসেম্বরেই এই বাজেটের একটি মিডটার্ম রিভিউ হওয়া উচিত।

সংলাপে তিনি বলেন, এক ধরনের উচ্চাভিলাষ বাদ দিয়ে বাজেটে আরেক ধরনের উচ্চাভিলাষ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়নের সক্ষমতা কম।

নন-ট্যাক্স রাজস্ব বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করে বলেন, “অর্থনীতিতে রাজস্ব আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে।”


হোসেন জিল্লুর রহমানের বক্তব্য শুধু একটি বাজেট বিশ্লেষণ নয়; এটি এক ধরনের হুঁশিয়ারি। গায়েবি মামলার ভয়, দুর্বল বাজেট কাঠামো, কৃষি-নির্ভর প্রবৃদ্ধির পথ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব—সবকিছু মিলিয়ে তিনি একটি ব্যাপক ও গভীর সংকেত দিয়েছেন, যার ওপর ভিত্তি করে সরকার যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভবিষ্যতের অর্থনীতিতে ঝুঁকি থেকেই যাবে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली