close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

‘গা জা র শাসক ঠিক করবে ফি লিস্তিনে র জনগণ’, ট্রাম্পের ‘পিস বোর্ড’ প্রত্যাখ্যান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Despite the ceasefire in Gaza, tensions rise over its future governance. Hamas and allied Palestinian factions have firmly rejected Donald Trump’s proposed “Peace Board,” declaring that only Palestini..

দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে গাজা উপত্যকায় কার্যকর হয়েছে বহু প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি। কিন্তু যুদ্ধ থামলেও গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন এক রাজনৈতিক সংঘাত। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ‘পিস বোর্ড’ বা শান্তি বোর্ড গঠনের পরিকল্পনা দিয়েছেন, তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি উপদলগুলো।

তাদের দাবি, গাজার শাসনব্যবস্থা কেমন হবে, তা নির্ধারণের পূর্ণ অধিকার শুধু ফিলিস্তিনি জনগণের। কোনো বিদেশি শক্তি বা আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না এবং করবে না।

গত শুক্রবার হামাস, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন যৌথভাবে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানায়, ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূখণ্ড ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আপসহীন থাকবে। তারা আরও দাবি করে, ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ও দৃঢ়তার কারণেই ইসরায়েলের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।

এই বিবৃতি আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর এই অবস্থান ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে একটি বড় রাজনৈতিক সংঘাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে—‘বোর্ড অব পিস’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করা হবে, যার চেয়ারম্যান থাকবেন ট্রাম্প নিজে। এতে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ পশ্চিমা প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকবেন। এই বোর্ড গাজা শাসনের জন্য একটি অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ গঠন করবে, যারা স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনা করবে।

কিন্তু হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি উপদল এই পরিকল্পনাকে “ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা” বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, বিদেশি নেতৃত্বাধীন কোনো বোর্ডের মাধ্যমে গাজা পরিচালনা মানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকার বহু বাস্তুচ্যুত মানুষ তাঁদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। ইসরায়েলি সেনারা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আংশিকভাবে সরে যাওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের ধ্বংসস্তূপে জীবনের চিহ্ন ফিরে এসেছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর নিজেদের হারানো প্রিয়জনদের সন্ধান করছেন।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি বন্দীদের হস্তান্তর করতে হবে, তবে কোনো উদ্‌যাপন বা প্রচার ছাড়াই। এছাড়া গাজায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০টি মানবিক সহায়তা ট্রাক প্রবেশের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পানি সরবরাহ ও আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনও এই পরিকল্পনার অংশ।

গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পর থেকে তারা ৬৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পুনর্গঠন। ধ্বংসস্তূপ সরানোর সরঞ্জাম প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক সহায়তা বিতরণ করবে বলে জানানো হয়েছে।

তবে চুক্তির একটি বিতর্কিত অংশ হলো “গডস হ্যান্ড ফাউন্ডেশন” (জিএইচএফ)-কে পাশ কাটিয়ে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে মানবিক সহায়তা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া। এই জিএইচএফ সংস্থা ইসরায়েল ও মার্কিন-সমর্থিত হওয়ায় ফিলিস্তিনিদের অনেকেই এটিকে ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

গত কয়েক মাসে জিএইচএফ-এর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করার সময় বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান। যদিও সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জন অ্যাকরি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির পরও তারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ফিলিস্তিনি উপদলগুলো এখন নিজেদের মধ্যে ঐক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা একটি জাতীয় বৈঠকের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ কৌশল গড়ে তুলতে চায়।

তবে এই বৈঠকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ অংশ নেবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। ফাতাহ ছাড়া কোনো জাতীয় ঐক্য সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

গাজার যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু রাজনৈতিক লড়াই এখনো শেষ হয়নি। গাজার জনগণ এখন তাকিয়ে আছে—তাদের ভবিষ্যৎ তারা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবে, নাকি বাইরের শক্তির হাতে আবারও নিয়ন্ত্রিত হবে।

لم يتم العثور على تعليقات


News Card Generator