ফিলিস্তিনের গাজায় আবারও বয়ে গেল মৃত্যু-ঝড়। বৃহস্পতিবার সকালেই ইসরায়েলি সেনারা নৃশংসভাবে গুলি চালায় দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের নেটসারিম করিডোর এলাকায়, যেখানে খাদ্য ও মানবিক ত্রাণের আশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত নিরীহ ফিলিস্তিনি।
আল-আওয়দা হাসপাতালের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঘটনাস্থলে ২২ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেক। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের বেশিরভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এই ঘটনার পর পুরো গাজা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র ক্ষোভ ও শোক। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘আমরা শুধু একমুঠো খাবার আর পানি চাইছিলাম। কিন্তু তাতেই জীবন দিতে হলো আমাদের ভাই-বোনদের।
ইসরায়েলের টানা অবরোধ ও হামলায় গাজা ইতোমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলির মুখে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি তুলেছে। তবে ইসরায়েল সরকার এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গাজায় গণহত্যার অভিযোগের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ছে আরেকটি উত্তেজনা—ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সামরিক সংঘর্ষ। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই একাধিকবার ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তারা দাবি করেছে, আরাকের একটি পুরনো পারমাণবিক চুল্লি ও নাতানজের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে।
এমন উত্তেজনার মধ্যেই হোয়াইট হাউসে প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। বরং দুই সপ্তাহ সময় নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘‘ট্রাম্প মনে করছেন, আলোচনার একটি সুযোগ এখনো রয়েছে। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং মিত্র ইসরায়েলের নিরাপত্তা সুরক্ষায় সবধরনের প্রস্তুতি রেখেছেন।
ইসরায়েল দাবি করছে, চলমান এই সংঘাতে তাদের অন্তত ২৪ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। অন্যদিকে ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ১৫ জুন পর্যন্ত ইরানে নিহত হয়েছেন ২২৪ জন। কিন্তু ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সির তথ্য মতে, শুক্রবার পর্যন্ত ইরানে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬৩৯।
এই তথ্যগুলো ইঙ্গিত দেয়, পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। একটি অঘোষিত যুদ্ধ যেন ধীরে ধীরে পূর্ণমাত্রায় রূপ নিচ্ছে।
একদিকে গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তির খেলার মাঠে রক্তে ভাসছে মধ্যপ্রাচ্য। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করবে কি করবে না—এই অনিশ্চয়তায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠছে। বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে আছে—এই রক্তঝরা উপত্যকায় কখন শান্তির সুবাতাস ফিরবে?