close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর উপর হা'ম'লা: তদন্ত দাবি শামা ওবায়েদের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষাকে প্রকাশ্যে চুল ধরে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় পুলিশের সদস্যও আহত, এলাকাজুড়ে উত্তেজনা—প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ।..

ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলেজ শাখার সংগঠক এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী বৈশাখী ইসলাম বর্ষা (১৮)-এর উপর নির্মম হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার (৩০ মে) বিকেল ৫টার দিকে ভবুকদিয়া গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে রাস্তার উপর বর্বরোচিত এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় বর্ষার ওপর চুল ধরে টানাহেঁচড়া ও বেধড়ক মারধর চালানো হয় বলে দাবি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।

ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন বৈষম্যবিরোধী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যদিও নগরকান্দা উপজেলা বিএনপি এই অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। তারা এটিকে দুই পরিবারের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করেছে।

এদিকে, ঘটনার পরপরই কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নগরকান্দা নির্বাচনী এলাকার প্রার্থী শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেই জড়িত থাকুক, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগী বর্ষা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে দুটি লাইভে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এক মিনিট ৯ সেকেন্ড ও ২৭ সেকেন্ডের ওই দুটি ভিডিওতে তিনি বলেন, “আমি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। সম্প্রতি একটি ইভটিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই কারণেই আজ আমাকে রাস্তায় ফেলে বিএনপির লোকজন চুল ধরে লাথি মেরে নির্যাতন করেছে।”

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, “আমাদের কি আন্দোলন করা ভুল ছিল? একজন মেয়েকে প্রকাশ্যে মারধর করা হচ্ছে, আর কেউ কিছু বলছে না। এমনকি তারা আমার বাবাকেও খুঁজছে মারার জন্য। আমি এখন ভয়ংকর অবস্থায় আছি, জানি না কী করবো।”


ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদেই হামলা?

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শরীফ বেপারি নামের এক যুবকের দ্বারা বর্ষার এক পরিচিত তরুণী যৌন হয়রানির শিকার হন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে গ্রাম্য শালিসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্ষা এই ইভটিজিংয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরই জের ধরে তার উপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে নগরকান্দা থানার পুলিশ ও ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে গেলে পুলিশের ওপরও হামলা চালানো হয়। কাঠের লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারধর করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

নগরকান্দা থানার ওসি সফর আলী জানান, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে গেলে এলাকাবাসী পুলিশের গাড়ি ঘিরে ফেলে, একজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। আহত পুলিশ চালক আব্দুল হান্নান শরীফ (৫৬) বলেন, “আমরা আসামি আনতে গেলে দেড় শতাধিক মানুষ আমাদের গাড়ি ঘিরে ধরে, লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয়। তবে তারা আসামি ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়।”


সড়ক অবরোধ ও উত্তেজনা

এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়কের ভবুকদিয়া অংশে শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দেন। পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।

ঘটনার প্রতিবাদে এবং বিচার দাবিতে ফরিদপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপত্র কাজী জেবা তাহসিন এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, “বিএনপির এক ক্যান্ডিডেট ও তাঁর ছেলে প্রকাশ্যে বর্ষাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। এই কাপুরুষোচিত হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করছি।”


তদন্ত ও গ্রেপ্তার

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় শরীফ বেপারীসহ মোট ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। শরীফের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় পৃথক মামলা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একটি সাধারণ ইভটিজিংয়ের ঘটনার প্রতিবাদ থেকে সংঘটিত এই বর্বর হামলা স্থানীয় রাজনীতির কুৎসিত প্রতিফলন বলেই মনে করছেন সচেতন মহল। তাদের দাবি, দলীয় পরিচয় না দেখে, ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় অঘটনের জন্ম হতে পারে।

এই ঘটনাটি শুধু একজন তরুণীর উপর হামলা নয়, এটি একটি ন্যায়সংগত প্রতিবাদের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্ষার পাশে আছে এবং দেশের সচেতন মানুষ এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এখন সময় সত্য উদঘাটনের, আর যারা দোষী—তাদের নিঃশর্তভাবে শাস্তির আওতায় আনার।

لم يتم العثور على تعليقات