ফ্যাসিবাদী সংবিধান বাতিল না হলে নির্বাচনের কোনো মানে নেই’—নাগরিক পার্টির সাফ কথা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, কেবল ‘মৌলিক সংস্কার’ই পারে দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে—না হলে আসন্ন নির্বাচন হবে একটি তামাশা মাত্র। তারা কী ধরনের পরিবর্তনের কথা বলছে? কেন বিএনপির সঙ্গে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মেলেন..

মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়’—এমন স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে সামনে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায় ন্যূনতম কিছু সংস্কারের মাধ্যমে, সেখানে এনসিপি বলছে, কেবল ‘মৌলিক পরিবর্তন’ই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্ত।

২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা এই নবগঠিত রাজনৈতিক দলটি জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তাদের মতে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো এখন এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক, ফ্যাসিবাদী শাসনে রূপ নিয়েছে, যা সংবিধান দ্বারা রক্ষিত। এই কাঠামো ভাঙা না গেলে যেকোনো নির্বাচন হবে মুখোশধারী গণতন্ত্রের উৎসব।

► ‘মৌলিক’ বলতে কী বুঝায় এনসিপি?

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ন্যূনতম সংস্কার’ বলে কিছু নেই—সংস্কার বলতে বুঝাতে হবে রাষ্ট্রের কাঠামোগত ও ক্ষমতার ভারসাম্যভিত্তিক রূপান্তর। এর মধ্যে রয়েছে:

  • প্রধানমন্ত্রী একইসাথে দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না

  • একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন

  • রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (NCC) গঠন

  • দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালু করা, যেখানে একক ও আনুপাতিক ভিত্তিতে নির্বাচন হবে

  • সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংস্কার

এই সংস্কারগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ই অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে হবে বলে এনসিপির নেতাদের দাবি।

► এনসিপির অবস্থান বনাম বিএনপির কৌশল

বিএনপি যেখানে মনে করে, সংবিধান সংশোধনের মতো বড় সংস্কার নির্বাচনের পরের সংসদে নেওয়া যেতে পারে, সেখানে এনসিপি মনে করে এই সংস্কারগুলো নির্বাচনপূর্ব অপরিহার্য। এনসিপির ভাষায়, বর্তমান ব্যবস্থা দিয়ে নির্বাচন দিলে দেশের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

এনসিপির নেতারা বলেছেন, ৭০ অনুচ্ছেদ ও দ্বিকক্ষ সংসদের বিষয়ে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত হলেও তারা এখনই এটি বাস্তবায়ন চায় না। এদিকে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জানায়, তারা সরকারের অবস্থানে সন্তুষ্ট নয় এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়।

► এনসিপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের অভিন্ন চেতনা?

যদিও এনসিপি জামায়াত বা ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি কোনো ঐকমত্যে পৌঁছায়নি, তবে তিন দলের বক্তব্যে মৌলিক সংস্কার বিষয়ে মিল দেখা গেছে। জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট করে বলেছে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইলে আগে ‘দৃশ্যমান মৌলিক সংস্কার’ করতে হবে। একই ধরনের দাবি করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও।

► কেন এমন দৃঢ় অবস্থানে এনসিপি?

এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য সারোয়ার তুষার বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী স্বৈরতন্ত্রকে বদলাতেই এ মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। এটা কেবল একটি ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রশ্ন নয়—এটি জনগণের ন্যায্যতা, অংশগ্রহণ ও জবাবদিহির প্রশ্ন।

তাদের ভাষায়, “যদি একটি দল ক্ষমতার কাঠামো সংস্কার ছাড়াও অন্য সব সংস্কারে রাজি হয়, তবু সেটি ‘মৌলিক’ হবে না।”

► গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের দাবি

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের দাবি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু সংবিধান সংস্কার নয়, দরকার একটি নতুন গণপরিষদ নির্বাচন। সেখানে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণীত হবে, যা ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

► এনসিপির চূড়ান্ত বার্তা:

  • বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন মানেই একটি ফাঁকা বুলির আয়োজন

  • ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন’ হবে আরেকটি প্রতারণামূলক আয়োজন

  • জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের বিচার এবং জনগণের স্বপ্ন পূরণ না হলে আন্দোলন চলবে

এনসিপি এখনো সব দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে তাদের বার্তা স্পষ্ট—‘সংবিধান বদলাও, তারপর নির্বাচন করো।’

Ingen kommentarer fundet